পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ՀՀ ծ অফিসার একবার উৎপলের দিকে চাহিয়াই কহিলেন, “নমস্কার।” সরোজ, রমা ও উৎপল বাহির হইয়া আসিয়া যখন মোটরে আরোহণ করিল,তখনও অফিসার প্ল্যাটফরমে দাড়াইয়া চিন্তা করিতেছিলেন, ঐ মুখ তিনি পূর্বে কোথায় দেখিয়াছেন। কিন্তু কোথায়? মোটরে ছয়জনের বসিবার স্থান ছিল। কুমারী রমা সম্মুখের আসনে নতমুখে বসিয়া রহিল। তাহার মুখে শান্ত আভা প্রতিফলিত হইতেছিল। - পশ্চাতের আসনে উৎপল সরোজের সহিত উপবেশন করিল। মোটর চলিতে আরম্ভ করিলে উৎপল কহিল, “কখনও যে এমন একটি দিন আসবে, আমি স্বপ্নেও ভাবতে পারতাম না।” উৎপলের স্বরে ঐকান্তিকতার সুর ধ্বনিত হইয়া উঠিল। সরোজ সবিস্ময়ে বক্তার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “কেন, আপনি কি সর্বদা কাজে ব্যস্ত থাকেন, উৎপলবাবু?” উৎপল মৃদুহাস্যে কহিল, “কাজ যত না হোক, অকাজেই বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ি। গত তিনটা মাস এমনি অকাজে অপব্যয় করেছি।” সরোজ কিছু বুঝিতে না পারিয়া কহিল, “আপনি কি মোগলসরাই থেকে বরাবর আসছেন?” “না, কলকাতা থেকে। এমনি আসছিলাম, সহসা মনে হ’ল, পূর্বাহুে আপনাকে জানানো আবশ্যক। তাই মোগলসরাই থেকে তার কোরে দিই।” অনতিবিলম্বে মোটর আসিয়া প্রাসাদ ফটকে প্রবেশ করিল। সুবৃহৎ ফটকের দুইপাশ্বের সেন্ট্রি সঙ্গিন বক্ষে নামাইয়া প্ৰভু ও মাননীয় অতিথিকে অভিবাদন জানাইল। উৎপল প্ৰশংস-দৃষ্টিতে পাথরের দুর্গের মত পুরাকালের প্রাসাদের দিকে চাহিয়া রহিল। মিঃ সোম মহাসমারোহে একমাত্র পুত্র সরোজের বিবাহের বৌ-ভাত উৎসবের ভোজ সম্পন্ন করিলেন। বহু বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, অভ্যাগত, আহুত, অনাহুত আসিয়া (৬াজে অংশ গ্রহণ করিয়া মিঃ সোমকে আপ্যায়িত করিয়া গেল। সন্ধ্যার পূর্বে ভোজপর্ব শেষ হইয়া গেল। শ্রান্ত ও ক্লান্ত হইয়া মিঃ সোম শয় প্রবেশ করিলেন। দ্বিতলের ড্রইংরুমে বসিয়া কয়েকজন বিশিষ্ট নর-নারী আলাপ-আলোচনা করতেছিলেন। তন্মধ্যে উৎপলই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছিল। সুপুরুষ যুবা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর বরপুত্ৰ সকলের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছিল রমা সারাদিন দূরে দূরে খাকিয়া ড্রইংরুমে উপস্থিত হইয়া উৎপলের নিকট হইতে দূরে অথচ তাহাকে পরিষ্কররূপে দেখা যায়—এরূপ ব্যবধানে একখানি সোফায় বসিয়া কথাবার্তা শুনিতেছিল;কিন্তু কোন মালাপ-আলোচনায় অদ্য যোগ দিতেছিল না। বিলাত ফেরত পরিবার। সুতরাং বাঙালি হিন্দুঘরের সনাতন প্রথার ব্যতিক্রম ঘটাই স্বাভাবিক এবং তাহা পূর্ণ মাত্রাতেই ঘটিয়াছিল। রমার মা-ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। রমার দুর-সম্পৰ্কীয়া কাকামী বেথুনে পড়া মেয়ে, এক সময়ে উৎপলের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সত্যিই আমি আপনাকে দেখে লিম্মিত হচ্ছি, উৎপলবাবু! আপনার চেহারার সঙ্গে দসু মোহনের অসম্ভব সাদৃশ্য আছে।” উৎপল মৃদু হাসিয়া কহিল, “আপনি তাকে চেনেন, সবিতা দেবী?”