পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা S a○ সরোজ বিস্মিত হইয়া কহিল, “কেন, এ-ক্ষেত্রেই বা হবে না কেন?” উৎপলের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল; সে কহিল, “সব কেন’র কি জবাব দেওয়া যায়?” রমার মুখ সহসা স্নান হইয়া উঠিল দেখিয়া সবিতা দেবী তাহার নিকটে গিয়া নিম্নস্বরে কহিলেন, “হারে রমা, তোর কি হ’ল বল দেখি? আমাদের সম্মানিত অতিথি উনি, দসু্যু মোহনের সঙ্গে মুখের সাদৃশ্য আছে বোলে তোর এমন ভাবে দূরে দূরে থাকা ভাল দেখায় না, মা। উৎপলবাবু কিছু মনে করতে পারেন।” উৎপল মৃদুশব্দে হাসিয়া উঠিল। কহিল, “আমিই অপরাধী, সবিতা দেবী। রমা দেবী যে বিনা কারণে আমাকে এই শাস্তিটুকু দিচ্ছেন না, তা আমি বিশ্বাস করি।” সরোজ বিস্মিত হাস্যে কহিল, “তার মানে? আপনি কি দসু মোহন যে, রমার এই অহেতুক ভয় সমর্থন করছেন?” রমা চাপা বিরক্ত কণ্ঠে কহিল, “আঃ তোমার সব কি যে বকছ! আমার বড় মাথা ধরেছে, আমি আর দাঁড়াতে পারছি না!” সরোজ হাসিয়া কহিল, “তাই বল, মাথা ধরেছে। সত্যিই তুই বিশ্বাস করিস না যে...” উৎপল বাধা দিয়া ব্যগ্র কষ্ঠে কহিল, “তবে আর একটা মিনিট এখানে নয়। আসুন আপনারা। মাথা ধরবার যে ভীষণ যন্ত্রণা, আমার বিশেষ রকম অভিজ্ঞতা আছে।” অর্ধঘণ্টা পরে এই দলটি মিঃ সোমের ড্রইংরুমে উপস্থিত হইলেন। উৎপল প্রত্যাশা করিয়াছিল যে রমা প্লাসাদে উপস্থিত হইয়া শয়ন করিতে যাইবে এবং তাহার কল্পনা সত্য হইল দেখিয়া পরম খুশি হইয়া সরোজকে কহিল, “আপনাদের প্রাসাদের যে অভিনব প্রবাদ-কাহিনী প্রচলিত আছে, আপনার মুখে শোনবার জন্য আমার বড়ো আগ্রহ হচ্ছে।” সরোজ কহিল, “প্রবাদ-বাক্যে আমাদের কোন আস্থাই নেই। কারণ গত কয়েক শত বৎসর ধরে কতজন উত্তরাধিকারীই যে কত অর্থ এই প্রবাদ-বচনের জন্য অপব্যয় করেছেন, তার ইয়ত্তা নেই।” উৎপল কহিল, “আপনাদের পরিবারিক ইতিহাসের সঙ্কেতিক কথাগুলো আমাকে দেখাতে পারেন ?” - of “অনায়াসে পারি। আচ্ছা, আমার সঙ্গে আসুন, নীচের ঘরে না গেলে আপনাকে অল্প সময় পরে একখানি মরক্কো চামড়ায় পুস্তকের আঁকারে বাধানো খাতা লইয়া আসিয়া সরোজ কহিল, “আসুন।” প্রাসাদের নিম্নতলে পশ্চাদিকে একটি অন্ধকার কক্ষে উপস্থিত হইয়া সরোজ বাতি জ্বালাইয়া কহিল, “এই সেই ঘর, আর এই সাঙ্কেতিক চিহ্ন—দেখুন।” সরোজ খাতা খানি উৎপলের হাতে দিল । উৎপলের চক্ষু দুটি আনন্দে, উৎসাহে যেন জ্বলিতে লাগিল। সে খাতায় লেখা সাঙ্কেতিক চিহ্নগুলি অভিনিবেশ সহকারে পরীক্ষা করিয়া ঘরের চারিদিকে ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। প্রস্তর-নির্মিত বৃহৎ কক্ষ। চারিদিকের মেঝে ও দেওয়াল এরূপ মসৃণ যে কোথাও একটু দাগ পর্যন্ত নাই।