পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S&8 মোহন অমনিবাস বহুক্ষণ ধরিয়া নানা ভাবে পরীক্ষা করিয়া উৎপল মৃদু শান্ত হাস্যে কহিল, “না, আমার দ্বারা হ’ল না বোধ হয়।” সরোজের মুখের ভাবের কিছুমাত্র পরিবর্তন হইল না। সে কহিল, “আমরা বহু চেষ্টা করেছি। সক্ষম হইনি। আমরা এখন বিশ্বাস করি যে, মুসলমান-সাম্রাজ্যের ধনের খ্যাতি বিশেষ প্রবল ছিল, তাই রাজধানী আগ্রা শহরের বুকে এই দুর্গ-প্রাসাদকে ভিত্তি কোরে এমন একটা সম্পদের কাহিনী রচিত হয়েছিল। যাক, এখন ওপরে যাই চলুন। এখানে বদ্ধ হাওয়ায় আপনার শরীর অসুস্থ হতে পারে।” উৎপল স্নিগ্ধ হাস্যে কহিল, “আমার দেহ ননীর নয়, এর চেয়েও ঢের খারাপ ঘরে থাকার অভ্যাস আমার আছে।” একান্ত বিনয়ের অভিব্যক্তি ভাবিয়া সরোজ হাসিয়া উঠিল এবং কক্ষ হইতে উভয়ে বাহির হইয়া আলো নির্বাপিত করিয়া দিল। সহসা একটু লঘু পদশব্দ উত্থিত হইল—কে যেন দৌড়াইয়া পলাইয়া গেল। উৎপলের নাসিকায় এসেন্সের মৃদু গন্ধ প্রবেশ করিল, সে মনে মনে হাসিয়া ভাবিল, যে অঙ্গের এই গন্ধসৌরভ সেই অঙ্গের মালিককে আমি চিনি। কিন্তু যে কারণে রমা এরূপ গোপনে আসিয়াছিল, তাহা ভাবিয়া উৎপলের মন সহসা বিষগ্ন হইয়া উঠিল। সরোজের সহিত উপরে উঠিয়া উৎপল শুনিল, তাহাকে খাইতে দেওয়া হইবে কিনা, রমার কাকীমা ভৃত্যকে জানিতে পাঠাইয়াছেন। উৎপল ঘড়ির দিকে চাহিয়া দেখিল, রাত্রি ১১টা বাজিতেছে। আগামী রাত্রির কথা সেরে নিয়ে একটু ঘুমানো যাক।” পরদিন প্রভাতে চা-পানাদি পর্ব শেষ হইলে ভৃত্য সংবাদপত্র দিয়া গেল। উৎপল আগ্রহ সহকারে একখানি ইংরাজী সংবাদপত্র খুলিয়া পাঠ করিতে লাগিল। রমা গত কল্য দূরে দূরে কাটাইয়াছিল। তাহার মন উৎপল অর্থাৎ মোহনের সম্মুখে লজ্জা-হেতু যে এরূপ করিয়াছিল, তাহা নহে। রমার সে দুর্বলতা বিশেষ ছিল না। কিন্তু সে আপন মন লইয়া বিপদে পড়িয়ছিল। সে আপনার নিকট আপনাকে প্রতারিত করিতেছিল। উপরন্তু তাহার উদ্বেগ ও শঙ্কা জাগিয়াছিল যে, মোহন তাহার প্রতি আসক্ত হইয়া পড়িয়াছে। সে বিষয়ে বহু রকমে বহু প্রমাণ দিতে মোহন ক্রটি করে নাই। তাহা হইলেও মোহনের এই বর্তমান আগমনের উদ্দেশ্য কি, তাহা সে জানিত না। কেন উনি আসিয়াছেন ? কিজন্য আসিয়াছেন ? এই প্রশ্ন গত দিন ও রাত্রি ধরিয়া রমার মনে বার বার সে হইবে ? এই ভয়ে রমার মন আতঙ্কে, উদ্বেগে বিহুল হইয়া উঠিয়াছিল। অগ্রজের শত প্রশ্ন, অনুরোধেও তাহার মন তথাকথিত সম্মানিত অতিথির জন্য স্বাভাবিক হইতে পারে নাই। সে একটি বারের জন্যও শঙ্কাহীন সরল দৃষ্টিতে মোহনের মুখের দিকে চাহিতে পারে নাই!