পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ২২৭ আপনার ছায়া-মূর্তি ও মধু স্মৃতি।” রমা অধৈর্য হইয়া কহিল, “দয়া কোরে আপনি থামুন, আপনি চুপ করুন। আমাকে ও-সব কথা শোনাবেন না আপনি। আমি...আমি....” “বলুন, রমা দেবী? উৎপল কহিল। “না, কিছু না। আমাকে আপনি ক্ষমা করুন।” বলিয়া রমা সহসা চেয়ার ত্যাগ করিয়া উঠিয়া দাড়াইল ও অগ্রসর হইবার উপক্রম করিলে মোহন ব্যগ্রকষ্ঠে কহিল, “যাবেন না, যাবেন না, দয়া করে আমার আর একটা কথা শুনে যান।” কিন্তু রমা দাড়াইল না। কঁাপিতে কাপিতে কক্ষ হইতে বাহির হইয়া গেল। উৎপলের মুখে বেদনার চিহ্ন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। সে ক্ষণকাল রমার গমন পথের দিকে চাহিয়া টেবিলের উপর মাথা নত করিয়া বসিল। তাহার যে-চক্ষুতে কেহ কখনও অশ্রু দেখে নাই, সেই চক্ষু হইতে অবিরল ধারায় অশ্রু ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। অবশেষে কি পাষাণও প্রেমের আগুনে দ্রবীভূত হইল ? দুর্গ-প্রাসাদের ড্রইংরুমে সন্ধ্যার পর নিয়মিত সভা বসিয়াছিল। রায়বাহাদুর বলিতেছিলেন, "ভাল বিপদে পড়া গেল দেখছি। দসু মোহনটার জ্বালায় আর শাস্তিতে থাকতে পারা যাবে •If I’” সরোজ হাসিয়া কহিল, “দাদুকে মোহন পত্র দিয়েছে না-কী? কুমার নিত্যবিক্রমের মত?” রায়বাহাদুর কহিলেন, “একই চাল দুবার চলে না, ভায়া!” “তবে? তবে আপনার এত কিসের ভয় বলুন তো?” সরোজ জিজ্ঞাসা করিল। রায়বাহাদুর বিরক্তস্বরে কহিলেন, “মোহনের কাছে কিসের যে ভয়, আর কিসে নয় তা’ কে বলবে, সরোজ? যে দসু্যর জন্য এত বড়ো গভর্নমেন্ট পর্যন্ত উদ্বেগে অস্থির হয়ে পড়েছে, তার জন্য আমাদের মত লোক যে ভয়ে আত্মহারা হবে, এমন কি আশ্চর্যের কথা? আমি শুধু ভাবছি, এত জায়গা থাকতে মরতে আগ্রা বেড়ানোর শখ তার হল কেন ?” $o, উৎপল মৃদু হাস্যমুখে কহিল, “আপনার ভয় হয়তো নিতান্ত অর্থহীন হতে পারে। কারণ সংবাদপত্রে লিখেছে, মোহন তাজমহল দেখতে আসছে।” তপ | আছে কিনা! আপনি ক্ষেপেছেন? তাজের স্মৃতি দেখবার জন্য সে এখানে আসছে—এত অবসর মোহনের নেই। শুনেছে, অনেক রুই-কাতলা এখানে আছে, আর জিহার জল সরেছে। বুঝিনে কিছু যেন!” রমা অপেক্ষাকৃত সহজ-স্বরে কহিল, “দাদামশায়, আপনি নির্ভয় হোন। আমি তাকে নিষেধ কোরে দেবো আপনার কোন অনিষ্ট করতে। কারণ আপনি তো সব কিছুই আমার নামে উইল কোরে যাবেন বলেছেন। বলেননি, দাদু?” রায়বাহাদুর বিস্ফারিত দৃষ্টিতে চাহিয়া কহিলেন, “তোমার কথাই সে শুনবে কি-না ! আর দিদির আমার কত সাহস ইল্লি-দিল্লী-বিলেত ঘুরে এসে, তা’ বোঝা গেছে। মোহনের মত উৎপল ভায়ার মুখের সাদৃশ্য দেখে যে ভয়ে ভিজে বেড়াল বনে যায়, মুখের কথা