পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ২৩১ মন বিরূপ হইয়া ইচ্ছা-পূরণের পথে বাধা হইয়া দাঁড়াইয়াছিল, তাহার হেতুটিও স্পষ্ট ছিল না। যদি রমা গ্রহণ না করে, যদি এই জিনিসের উৎপত্তি-স্থল জিজ্ঞাসা করে, তাহা হইলে সে কি করিবে ? যদিও অপহৃত হীরক-কষ্ঠির বহু অদল-বদল করাইয়া তাহা সনাক্ত করণের দায় হইতে সফল হইয়াছিল, তবু যে-ভাবে সে তাহা সংগ্ৰহ করিয়াছে, রমা কর্তৃক অনুরুদ্ধ হইলে সে সত্য না বলিয়াও পারবে না। মিথ্যাকে মোহন অন্তরের সহিত ঘৃণা করে। তাহা ছাড়া যে নারী তাহার জীবনে অপূর্ব অভিনব অনুভূতির সঞ্চার করিয়াছে, সেই প্রিয়তমা নারীকে ছলনা করিবে, মিথ্যা কহিয়া প্রতারিত করিবে, এরূপ কল্পনা করাও মোহনের পক্ষে কষ্টকর। সুতরাং দ্বিধায় পড়িয়া মোহন রমার নিকট উপহার লইয়া Mাড়াইতে পারে নাই। মোহন গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হইল। আর সময়ও নাই। বেকার সাহেব আসিতেছেন। তিনি আসিলে তাহার পক্ষে আগ্রায় থাকা সম্পূর্ণভাবে অসম্ভব ব্যাপার হইবে। মাত্র এই রাত্রিটুকু। - ঘড়িতে ঢং করিয়া ১টা বাজিল। সঙ্গে সঙ্গে মোহন বিছানা ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল এবং ধীরে ধীরে দ্বার মুক্ত করিয়া অন্ধকারের ভিতর তীব্র দৃষ্টিতে চাহিয়া ক্ষণকাল নিঃশব্দে দাড়াইয়া রহিল। কোন দিকে কোন শব্দ না পাইয়া মোহন পকেটের ভিতর হাত দিয়া একটা ছোট টর্চ বাহির করিয়া অতি নিঃশব্দে কক্ষ-দ্বার বন্ধ করিয়া সিড়ি বাহিয়া নীচে নামিতে লাগিল। অন্দর মহলের পিছনের দ্বার সতর্কভাবে অর্গলমুক্ত করিয়া উত্তর মহলে বাহির হইল এবং যে-কক্ষের ভিতর তথাকথিত সুড়ঙ্গ পথের মুখ আরম্ভ হইয়াছে, চারিদিকে সতর্ক দৃষ্টি ফেলিতে ফেলিতে সেই কক্ষে উপস্থিত হইল। দাড়াইয়া থাকিয়া পকেট হইতে একখানি লেখা কাগজ বাহির করিয়া মেঝের উপর উপবেশন করিল এবং টর্চের আলো কাগজখানির উপর নিক্ষেপ করিয়া গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হইল। ধীরে ধীরে মোহনের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল, সে অস্ফুট কষ্ঠে কহিল, "এত সহজে যে সমস্যার সমাধান হয়, সেই সমস্যা যুগ যুগ ধরে অমীমাংসিত রয়ে গেছে! মোহন, তোমার অদৃষ্টে যে গুপ্ত রাজার সম্পদ লেখা আছে, তা কি অন্যে ভোগ করতে পারে?” ...” لامي" জরিপ করিতে লাগিল। চারিদিক নানাভাবে ফুটব্রুল দিয়া জরিপ করিয়া এক সময়ে অস্ফুট কণ্ঠে কহিল, “পেয়েছি, আমি পেয়েছি। কখনও ভুল হতে পারে না। এই স্থানে গুপ্তদ্বারের মুখ আছে। নিশ্চয়ই আছে!” মোহনের মন আনন্দে উত্তেজিত হইয়া উঠিল। তাহার বক্ষ-স্পন্দন দ্রুততর হইয়া উঠিল। সে দুই হাতে বক্ষ চাপিয়া কয়েক মুহুর্ত নিঃশব্দে অপেক্ষা করিতে লাগিল, হাতের টর্চের আলো দেওয়ালের উপর নিক্ষেপ করিয়া মোহন আপনাকে আপনি কহিতে লাগিল, “গুপ্তধন যদি না-ও থাকে, তা’ হ’লেও গুপ্তপথ আবিষ্কার হলেও প্রায় লক্ষ টাকার রেশমের কাপড়—যা মিঃ সোম বৰ্মায় চালান দেবার জন্য পাশের ঘরে রেখেছেন, সেগুলোকে চালান দিয়ে মিঃ সোমের শ্রম-লাঘব করতে তো আর কেউ বাধা দেবে না।”