পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন ও রমা ২৩৩ ছিল, সেই ঘরের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া দেখিল, তালা ভগ্ন...কক্ষ শূন্য। রমা বিহুল মুখে ক্ষণকাল চাহিয়া রহিল, পরে যেমন মোহন তাহার দিকে দুই পা অগ্রসর হইয়াছে, সে হাতের আলো ফেলিয়া দিয়া দুই হাতে মুখ চাপিয়া চিৎকার রোধ করিতে করিতে ছুটিয়া অন্দরমহলে প্রবেশ করিল। মোহন সহসা এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির ভিতর পড়িয়া বিহুল হইয়া উঠিলেও জ্ঞান হারায় নাই। রমা ছুটিয়া যাইবার পর-মুহুর্তে সে দৌড়াইয়া রমার পশ্চাদ্ধাবন করিয়া ভিতর মহলে প্রবেশ করিয়া দেখিল, রমা সিড়ির উপর মাথা রাখিয়া নিঃশব্দে রোদন করিতেছে। ভোরের আলো রমার মুখের উপর পতিত হওয়ায় মনে হইতেছিল, প্রস্তর ফাটিয়া ঝরণা-ধারা ঝরিয়া পড়িতেছে। মোহন ধীরে ধীরে রমার সন্নিকটে উপস্থিত হইয়া রমা উত্তর দিল না। মোহন আবার ডাকিল, “রমা দেবী। রমা।” রমা দলিতা ফণিনীসম মাথা তুলিয়া কহিল, “আপনার লজ্জা করে না? আমাকে রমা বোলে ডাকবার অধিকার রাখেন নি আপনি ! যান, আপনি যান, আমার কাছ থেকে যান আপনি " মোহনের মুখে কাতর হাসি ফুটিয়া উঠিল। সে কয়েক মুহুর্ত নিঃশব্দে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “কি জানো রমা, স্বভাব আমার এমনি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কিছুতেই নিজেকে সম্বরণ করতে পারি না। ধনীর ধন, ধনীর সম্পদ আমার মনে প্রতিহিংসার আগুন জ্বালিয়ে তোলে, আর সব কিছু বিবেচনা কোথায় চলে যায়, জানতেও পারিনে। তবে আমি তোমাকে এই কথা দিচ্ছি, আজ যা আমি চুরি করেছি, কাল বেলা আড়াইটার মধ্যে সব ফেরত দেবো। আমি শপথ করছি, রমা, সব ফেরত দেবো। তুমি শুধু আমার দিকে একবার তেমনি করে চাও, রমা। একবার বলো, তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ।” রমা কাঁদিতেছিল, মোহনের শপথ তাহার মনে কোন বিশ্বাস জন্মাইল না। তাহা বুঝিয়া মোহন পুনরায় কহিল, “কাল বেলা আড়াইট বাজিবার পূর্বে তোমার বাবার যা গেছে, তিনি সব ফেরত পাবেন। রমা?” ఉు রম কোন উত্তর দিল না। মোহনের মুখে ব্যথার চিহ্ন ফুটিয়া উঠিল। কিন্তু সে কিছু বলিবার পূর্বে সহসা রমা ব্যগ্রকণ্ঠে কহিল, “তুমি যাও, এখনি যাও, ঐকে আসছে, এখনি তোমাকে সন্দেহ করবে।” so একটা বিড়াল সিড়ি দিয়া নামিতেছিল। তাহা দেখিয়া মোহল হাস্যমুখে কহিল, “আমাকে তবে ক্ষমা করলে তো, রমা ? বলো, একবার বলো। রমা ?” রমা চকিতের জন্য অশ্রসিক্ত চক্ষুতে চাহিয়া হরিণীর মত দ্রুত লঘু গতিতে সিড়ি দিয়া উপরে অদৃশ্য হইয়া গেল। মোহন ক্ষণকাল একদৃষ্টে চাহিয়া থাকিয়া আপন শয়ন-কক্ষে প্রবেশ করিল। সুরক্ষিত দুর্গ-প্রাসাদে সঙ্গিনধারী ফটকের পাহারা ভেদ করিয়া কিরূপে এই ভীষণ চুরি সম্ভব হইল, তাহা চিন্তা করিতে করিতেআগ্রার পুলিস-সাহেব হইতে পাহারাওয়ালা পর্যন্ত বিপন্ন হইয়া উঠিল। ফটকের চাবি বন্ধ রহিয়াছে, ফটকের পাশ্বে ক্ষুদ্র কক্ষে সঙ্গিন পাহারা ও দারোয়ান-গুষ্ঠি পালা করিয়া রাত্রিতে পাহারা দিয়াছে, চারিদিকে পনেরো হাত উচ্চ পাচিল টপকাইয়া যাইবার কোন চিহ্নই কোন স্থানে দেখা যায় নাই, অথচ লক্ষাধিক টাকা