পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8ર মোহন অমনিবাস l সরোজ হাসিতে হাসিতে কহিল, “ঠাকুরদাকে মোহন-ম্যানিয়ায় ধরেছে। কিন্তু আপনার বেকারের জন্য চিন্তিত হবার প্রয়োজন নেই। কারণ মিঃ স্যানিয়েল, যিনি একবার মোহনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন, কয়েক মাসের জন্য আগ্রায় বদলি হয়ে এসেছেন।” “তা’ কি আর জানি না, ভায়া? কিন্তু সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফল কি হয়েছিল, তাও তো জানো? তবেই মিঃ স্যানিয়েলের ওপর আমরা কতটুকু নির্ভর করতে পারি, তা বুঝতে আমার কষ্ট হয় না।” রায়বাহাদুর ধীরে ধীরে কহিলেন। মিঃ সোম কহিলেন, “আপনি মিছে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, কাকাবাবু! মোহন আর এদিকে আসবে না। কারণ গতবারে তার আশা যে ভাবে ব্যর্থ হয়েছে, তারপর সে যে আর আগ্রার দিকে মন দেবে আমার বিশ্বাস হয় না।” রায়বাহাদুর কহিলেন, আচ্ছা, মিঃ স্যানিয়েলও তো বাঙলা গভর্নমেন্টের একজন সিনিয়র ডিটেক্‌টিভ ?” “তাতে আর সন্দেহ আছে, দাদু? এবার মিঃ স্যানিয়েল যে রায়বাহাদুর হতে চলেছেন, তা’ শোনেন নি আপনি?” - রায়বাহাদুর হাসিয়া কহিলেন, “মোহন যে-দুর্দশা তার করেছিল, তার ক্ষতিপূরণের জন্য অন্ততঃ পক্ষে রায়বাহাদুর করাই উচিত। আমাদের গভর্নমেন্টের হৃদয় আছে হে ভায়া, হৃদয় আছে।” বলতে কি ভায়া, এই দস্যুটাকে আমি ঘৃণাও করি যত, কায়মনোপ্রাণে শ্রদ্ধাও তত করি। লোকটার আর যে কোন দোষই থাকে, তার মনটা যে বিরাট ভাবে প্রশস্ত, সে বিষয়ে আমার কোন সন্দেহই নেই। হৃদয়ও আছে। কি—না, কিন্তু থাক। আমি আসি, বাবাজি।” মিঃ সোম রায়বাহাদুরের সঙ্গে ফটক অবধি গিয়া তাহাকে মোটরে তুলিয়া দিলেন ও প্রত্যাবর্তনের পথে অফিস কক্ষে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন, সেক্রেটারী মিঃ ঘোষাল অনন্যমন হইয়া আপন কার্যেরত রহিয়াছেন। এই কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তিটির দিকে চাহিয়া মিঃ সোমের মন সহানুভূতিতে পূর্ণ হইয়া উঠিল। তিনি ক্ষণকাল দাড়াইয়া অন্দর মহলে গমন করিলেন। ...o (5) ృగ গভীর রাত্রি। সুবৃহৎ দুর্গ-প্রাসাদের ওপর স্তব্ধতা বিরাজ করিতেছিল। স্নান চন্দ্রলোকে প্রাসাদ ও প্রাসাদের বাহিরে বহুদুর ব্যাপিয়া অতীতের ধ্বংসাবশেষ ও সমাধি স্থানগুলি ভয়াবহ রূপ ধারণ করিয়াছিল। প্রাসাদের ত্রিতলে একটি সুসজ্জিত কক্ষে পালঙ্কের উপর রমা নিদ্রা যাইতেছিল। সহসা কি একটা শব্দে তাহার নিদ্রাভঙ্গ হইল। সে পালঙ্কের উপর উঠিয়া বসিল ও একাগ্র চিত্তে উৎকর্ণ হইয়া রহিল। কিন্তু কোন দিকে কোন শব্দ না পাইয়া অপেক্ষাকৃত নিশ্চিন্ত মনে খাট হইতে নামিয়া অর্ধ মুক্ত জানালা পূর্ণ মুক্ত করিয়া দিয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া রহিল। পাণ্ডুর চন্দ্রালোকে ভাসিত সমাধি-স্থানের দিকে এবং প্রাসাদ সংলগ্ন অতীতের বৃহৎ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে সে চাহিয়া রহিল।