পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমার বিয়ে ՀԳ Գ রায়বাহাদুর কয়েক মুহুর্ত দ্বিধা করিয়া কহিলেন, “আজ একটা কথা বলি, ভায়া। আশা করি, তুমি মনে দুঃখ বা রাগ করবে না। যদি আমার মতের সঙ্গে তোমার মত না মেলে, তবে এই ভেবে আমাকে উপেক্ষা কোরো যে, আমি বুঝতে না পেরে ভুল করেছি।” “কি কথা, দাদু?” সরোজ প্রশ্ন করিল। - “আচ্ছা, ইদানীং রমা বোনটির কি কোন বৈলক্ষণ্য তুমি লক্ষ্য করোনি?” “আপনি কি বোঝাতে চাইছেন?” সরোজ সচকিত হইয়া প্রশ্ন করিল। “আমি এই কথাটাই বলতে চাইছি যে, ভাই, রমার মনে দস্যু মোহনটার জন্য এতটুকুও ঘৃণা বা বিদ্বেষ কিছুই ছিল না।” রায়বাহাদুর শান্ত কণ্ঠে কহিলেন। সরোজ কহিল, “তাই যে একমাত্র সম্ভাব্য, দাদু। রমার সঙ্গে মোহন প্রথম সাক্ষাৎ হতেই যে সদ্ব্যবহার করেছিল, তেমন ব্যবহার যে-কোন ভদ্র-সন্তানের পক্ষে অনুকরণীয়। তবেই তেমন ব্যক্তির জন্য যদি শ্রদ্ধাই তার মনে সঞ্চিত হয়ে থাকে, তবে তা কিছু অস্বাভাবিক বলে ভাবছেন কেন আপনি ?” রায়বাহাদুর কুষ্ঠিত স্বরে কহিলেন, “শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালবাসা শোনা যায় যে এমন এক বস্তুতে পরিণতি লাভ করে, তা থেকে মানুষ ইচ্ছা থাকলেও সরে যেতে পারে না।” সরোজ চমকিত হইয়া কহিল, “মোহনকে রমা ভালবাসে, আপনি এই কথাই বলতে চাইছেন, দাদু?” রায়বাহাদুর কোন কথা বলিলেন না, নীরবে বসিয়া রহিলেন। সরোজ উত্তরের জন্য পীড়াপীড়ি না করিয়া ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া কহিল, “আপনার যুক্তিতে আমার মন সায় দেয় না, দাদু। রমার মত শিক্ষিতা মেয়ে যে জেনে শুনে একটা দসু্যকে ভালবাসবে, এমন কথায় আমার শ্রদ্ধা হয় না। রমা যে এমন নীচমনা নয়, তা' আপনিও যেমন জানেন, আমিও তেমনি বুঝি।” রায়বাহাদুর কহিলেন, “উচ্চ-নীচের কথা তো নয়, ভাই! শিক্ষা-অশিক্ষার প্রশ্নও নয়। মনের কারবার হিসাব-নিকাশের ধার ধারে না! মন বেহিসাবী—ভয়ঙ্কর বস্তু! মানুষ বুদ্ধির অহমিকায় চুলচেরা ভাগ করে বিচার করে সত্যি,কিন্তু যেখানে বুদ্ধি, জ্ঞান,শিক্ষা, চরিত্র সব অচল হয়ে পড়ে, সেখানে যুক্ত-তর্ক দিয়ে বিচার করতে যাওয়ার মত দুর্ভোগ আর কিছুই নেই।” -( সরোজ কিছুসময় নীরবে বসিয়া থাকিয়া কহিল, “যদি আপনার কথাই সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়, তা’ হ’লেও এক্ষেত্রে সঙ্গতি খুঁজে পাওয়া যায় কই, দাদু? কারণ যে মোহনকে আমরা জানি, চিনি, সে মোহনের পক্ষে এতখানি নীচ কাজ করা কি সম্ভব দাদু?” “নীচ কাজ।” রায়বাহাদুর যেন আঁতকাইয়া উঠিলেন, “তুমি এর মধ্যে নীচতা কি দেখতে পেলে, ভায়া ?” - সরোজ কহিল, “যে ব্যক্তি আমার বোনের এতখানি অপমান করতে পারে, সমাজের পবিত্র বন্ধন থেকে তাকে অধঃপতনের অতল গহ্বরে নিক্ষেপ করতে পারে, তাকে আর তার কাজকে নীচ ছাড়া আর কোন বিশেষণে ভূষিত করতে পারা যায়, দাদু? আমার কি ইচ্ছে হচ্ছে, জানেন?” “মোহনকে গুলি করা তো?” রায়বাহাদুর মুখ তুলিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন।