পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমার বিয়ে ২৮৭ এতদূরে—বিপদ আছে জেনেও, তার গতিবিধি প্রকাশিত হয়েছে জেনেও–ছুটে এসেছিল। পুরুষ নারীকে কতখানি ভালবাসলে তবে এমন বিপদের মুখে ঝাপিয়ে পড়তে পারে?” মেম-সাহেব সশ্রদ্ধ-স্বরে কহিলেন। মিঃ স্যানিয়েলের নিকট এই সংবাদ অভিনব। তিনি সবিস্ময়ে কহিলেন, “বিবাহের প্রস্তাব করেছিল না কি?” * “না। বেচারা সুযোগ পায়নি। মিঃ বেকার অকস্মাৎ এসে পড়ে তার সাধে বাদ সাধেন। মিঃ বেকার একথাও আমাকে বলেছিলেন যে, মিস সোম দসু্যটাকে ভালবাসেনও যত— ঘৃণাও করেন ততো।” - মিঃ স্যানিয়েল বিস্মিত স্বরে কহিলেন, “যাকে ভালবাসা যায়, আবার কি তাকে ঘৃণাও মেম-সাহেব মধুর হাস্যে উদ্ভাসিত হইয়া কহিলেন, “চলে, মিঃ স্যানিয়েল, চলে। আপনার জন্য আমার দুঃখ হয়। ভালবাসার, প্রেমের পরিপূর্ণ স্বাদ আপনার জীবনে হয়নি বলেই এমন প্রশ্ন আপনি করতে পারলেন, নইলে কিছুতেই পারতেন না।” . মিঃ স্যানিয়েল সলজ্জভাবে মুখ নত করিয়া কহিলেন, “সত্যই হয়নি, ম্যাডাম। বিশ বছর বয়সে পুলিসে চাকরি নিই। তারপরই হয় আমার বিবাহ। কিন্তু কাজের নেশায়, এমন মত্ত হয়ে উঠি যে, কখন কোন পথে, কোন অবসরে আমাদের যৌবন চলে গেছে জানতেও পারিনি। তারপর আমাদের একমাত্র সন্তান কেশবকে আমার অক্ষম দায়িত্বে অর্পণ করে আমার স্ত্রীও আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। সেও আজ দশ বৎসরের কথা। এই দশ বৎসর আমি নারী-জাতি সম্বন্ধে কোন আলোচনা করবারও অবসর পাইনি।” ইংরাজ তরুণীর মুখ সমবেদনায় ও করুণ আভাসে ভরিয়া গেল। তিনি এই হতভাগ্য, ভোগে বঞ্চিত, কর্তব্যপরায়ণ ভারতীয়ের ইতিহাস শুনিয়া ব্যথিত হইয়া পড়িলেন। কহিলেন, “তা আমি আপনার কথা শুনেই বুঝেছি, মিঃ স্যানিয়েল। সত্যই আমি আন্তরিক দুঃখিত আপনার জন্য। হা, এখন যে কথা হচ্ছিল। মোহন মিস সোমকে এমন প্রগাঢ় ভাবে কিছুতেই ভালবাসতে পারত না, যদি না সে মিস সোমের কাছ থেকে প্রতুিন পেত। সে প্রতিদান প্রকাশ্যেই হোক বা অন্তরেই হোক।” a So মিঃ স্যানিয়েলের মুখ বিস্ময়-আভাসে ভরিয়া গেল, তিনি কহিলেন, “এই কথাটা আমার বোধগম্য হ’ল না, ম্যাডাম। একজন অন্যজনকে ভালবার্সে ঠিক, কিন্তু সে যদি ভুলেও তা’ প্রকাশ না করে, তবে অন্যজন কি তার ওপর আকৃষ্ট হতে পারে? তাও কি কখনও সম্ভব হয় ?” মেম-সাহেব হাসিতে হাসিতে কহিলেন, “আবার আপনি অজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন, মিঃ স্যানিয়েল। আচ্ছা, আপনাকে আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ধরুন, একটি তরুণ একটি তরুণীকে ভালবাসে। কিন্তু তরুণীর কোন সুযোগ নেই তা’ প্রকাশ করবার। সুতরাং তরুণ ভাবে যে, তরুণী তাকে ভালবাসে না, অথচ সে তরুণীকে ভাল না বেসে পরিত্রাণ পায় না! এমন ঘটনা অহরহ ঘটতে দেখা যায়। একটু গভীর ভাবে ভাবলেই বুঝতে পারবেন যে, এক্ষেত্রে তরুণীর নীরব আকর্ষণই তরুণের প্রেম সঞ্জীবিত রাখতে সক্ষম হয়েছে। নইলে এক হাতে যেমন তালি বাজে না, তেমন এক পক্ষ থেকে কোন প্রেমেরই আকর্ষণ স্থায়ী হয় না।