পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন অমনিবাস ססי কমিশনার মৃদু হাস্য করিলেন। - উৎপল কহিলেন, “বেশ, আমার আঁকা ছবি দিয়ে আপনার ড্রইংরুম সজ্জিত করবার ভার আমি নিচ্ছি। আপনি আপনার আর্টের খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকুন তাতে কিছু ক্ষতি হবে না। কিন্তু আমার হিংসা হয় শুনে যে, পুলিস-বিভাগে এমন কী উচ্চাঙ্গের আর্টের আলোচনা হয়, যার দরুন আমাদের সাধনা এমন তুচ্ছ হয়ে যায়, স্যার?” কমিশনার হো-হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। তিনি এই বিখ্যাত শিল্পীর পরিচয় পাইয়া খুশি হইয়া কহিলেন, “আপনি যে আমাদের ড্রইংরুম সাজাবার স্বেচ্ছায় নিলেন, তাতে সত্য বলছি আমি কৃতজ্ঞ হলাম। তাছাড়া আমার স্ত্রী যে আনন্দিত হবেন, এ নিশ্চয়তাও আমি দ্বিধাহীন চিত্তে দিয়ে রাখছি। হ্যা, আমার আর্টের কি জানেন? আপনি নিশ্চয়ই জাদুকর দসু মোহনের কথা শুনেছেন?” আর্টিস্ট কহিলেন, “শুনেছি। মাত্র আদ্যকার কি একটা বাঙালা কাগজে মস্ত বড়ো এক প্রবন্ধ বা’র হয়েছে দেখলাম। কিন্তু সত্যিই কি দসু্যটা এমন অসমসাহসী?” কমিশনারের মুখের প্রফুল্ল ভাব নিঃশেষে নিশ্চিহ্ন হইয়া গেল। তিনি কহিলেন, “সে যে সাহসী তাতে আমার সন্দেহ নেই, কিন্তু যে চুরি করে, যে দসু-জীবন যাপন করে, যাকে প্রাণভয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হয়, তাকে কাপুরুষ ভিন্ন অন্য নামে অভিহিত করাতেও অপরাধ হয়! কিন্তু সে যে তীক্ষ বুদ্ধিশালী তাতে আমার সন্দেহ নেই।” : উৎপল সবিস্ময়ে কহিলেন, “সে এখন কোথায় আছে, কোন খবর পেয়েছেন?” । “না না, কোন খবরই আমরা রাখি না। তবে এইবার যে তার চালাকি ধরা পড়বে তাতেও আমার কোন সন্দেহ নেই। :ேே তবে সে এবার আমাদের কবলে যে আসবে বলাই বাহুল্য। কিন্তু আমার মনে হয় এই চিঠিখানা তার ধাপ্পা ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ বর্তমান যুগে ঐ পুরাতন পন্থা যে একেবারেই অচল, তা সে আমার মতই বিশ্বাস করে।” কমিশনার সাহেব গম্ভীর মুখে কহিলেন। উৎপল একমত হইয়া কহিলেন, “আমিও আপনার সঙ্গে একমত। তবে কিনা দসু্যটার ইতিহাস যা শুনি, তাতে সে যে ধাপ্পা দিয়ে নিজেকে সাধারণের কাছে খাটাে করবে, তা আমার বিশ্বাস করতে কেমন যেন বাধে। কারণ তার মূলধন যে সাধারণের সদিচ্ছ তা তার কার্য-প্ৰণালী অনুধাবন করলেই বোঝা যায়। যায় না, সার?” কমিশনার চিন্তিত মুখে কহিলেন, “হ্যা, এদিক দিয়ে দেখলে তাই মনে হয় বটে। কিন্তু দসুর আবার নৈতিকতা! যে চোর সে রাত্রি-বাসই লাভ মনে করে। আমি মুহুর্তের জন্য ভাবি না যে মোহনের কোন নৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। তা’ ছাড়া এ সব যে ব্যক্তির থাকে, সে কখনও হীন-বৃত্ত অবলম্বন করে না। চোর–চোর।দসু—দসু। এর মধ্যে আর কোন ব্যবধান নেই।” - উৎপলবাবু একাগ্র দৃষ্টিতে চাহিয়া শুনিতেছিলেন,কহিলেন, “দসু মোহন যে নিয়মিত ভাবে নানা সাধারণ প্রতিষ্ঠানে সাহায্য করে, সে সম্বন্ধে আপনার অভিমত শুনতে আমার ইচ্ছা হচ্ছে। কারণ আমরা সাধারণ লোক, আপনাদের মত সঠিক সংবাদ জানবার কোন সুযোগই নেই আমাদের।”