পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমার বিয়ে Վ) Հ Տ দ্বিতলে সুদৃশ্য ভেলভেট ছাওয়া গদি-যুক্ত চেয়ারের উপর সকলে উপবেশন করিলেন। শুক্লাদশমীর রাত্রি। গঙ্গার স্বচ্ছ কৃষ্ণ জলে চন্দ্রের কিরণ নাচিতেছিল। বিশ দাঁড় বজরাখানি তীর ছাড়িয়া মধ্য-গঙ্গায় উপস্থিত হইল ও দ্রুতগতিতে জল কাটিয়া ছুটিতে লাগিল। সকলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া বসিয়া রহিলেন। মিঃ স্যানিয়েলের পুত্র কেশব উচ্ছসিত আনন্দবেগ চাপিতে না পারিয়া এদিক-ওদিক করিয়া ছুটিয়া বেড়াইতে লাগিল ও গঙ্গা-বক্ষ আনন্দ ধ্বনিতে মুখরিত করিয়া তুলিল। মিঃ সোম বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া ভাবিতেছিলেন, মানুষ কত ধনের অধিকারী হইলে তবে এরূপভাবে জীবন যাপন করিতে পারে। একাধারে লক্ষ্মী-সরস্বতীর বর পুত্র, স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্যের এরূপ সমাবেশ কচিৎ দেখিতে পাওয়া যায়। তিনি একবার কন্যার বিমুগ্ধ মুখের দিকে, অন্যবার যুবক ডাঃ গুপ্তের দিকে চাহিয়া একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়িলেন। তাহার মনে তখন কি ইচ্ছা হইতেছিল, তাহা তাহার অন্তর্যামীই বলতে পারিতেন। মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “সত্য বলতে কি ডাঃ গুপ্ত, মানুষের জীবন যে এমন ভাবে ভোগ করা যায়, তা ইতিপূর্বে আমি জানতাম না। এখন আমার মনে শুধু এই কথাই উদয় হচ্ছে, শুধু বাজে কাজের পিছনেই এতদিন জীবনটা নষ্ট করেছি।” ডাঃ গুপ্ত মৃদু হাসিয়া কহিলেন, “কিন্তু এতেও কি শাস্তি আছে, মিঃ স্যানিয়েল ? নেই। মানুষের স্বভাবই এই—তার যা নেই, তারই জন্য সে আকুল হয়ে উঠে। কিন্তু সেই আকুলতা তার ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ না সে অভীষ্ট পূর্ণ করতে সক্ষম হয়। তারপর পুনরায় সেই অশাস্তি অন্য বস্তুকে লক্ষ্য ক’রে ধূমায়িত হতে থাকে।” মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “আমার ক্ষোভ কোন কিছু প্রাপ্তির আশায় নয় ডাঃ গুপ্ত। আমার দুঃখ এইজন্য যে, আমি এতদিন মিথ্যার পিছনে ছুটে বেড়িয়েছি। প্রকৃতি তার অফুরন্ত সম্পদ নিয়ে আমাদের যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে, সে দিকে দৃষ্টি না দিয়ে অন্যদিকে খোসার চাকচিক্যে মুগ্ধ হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছি।” ডাঃ গুপ্ত রমার দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আপনার এসব ভাল লাগছে, মিস সোম?” মিস সোমের মুখে স্নিগ্ধ হাসি ফুটিয়া উঠিল। সে লজ্জানত মুখখানি আরও অবনত `` সরোজ কহিল, “আপনি কতদিন বাঙলা দেশ ছেড়েছেন, ডাঃ গুপ্ত?” ডাঃ গুপ্ত কহিলেন, “আমি তো ছাড়িনি, মিঃ সোম। আমার জীবন কোন প্রদেশেই স্থির হয়ে বসে থাকে না। কার্য-ব্যপদেশে আমাকে সব প্রদেশেই ঘুরে বেড়াতে হয়।” সরোজ কহিল, “আমি আর একটি লোককে জানতাম, যার শিক্ষা-দীক্ষা, রূপ-ঐশ্বর্য আর সম্পদের সঙ্গে আপনার তুলনা করে চলে। কিন্তু—” এই অবধি বলিয়া সহসা সে নীরব হইল। - মিঃ স্যানিয়েল হাসিয়া কহিলেন, “আপনি নিশ্চয়ই মোহনের কথা বলছেন সরোজবাৰু?” “আজ্ঞে হা। কিন্তু উভয়ের মধ্যে কী ভীষণ ব্যবধান দেখুন, কাকাবাবু। একজন প্রাণভয়ে রাত্রির অন্ধকার বেছে নেয়, আর একজন দেবতার মতই পুত, পবিত্র অস্তঃকরণ রমা অগ্রজের উচ্ছাস ভরা মুখের দিকে স্নান মুখে চাহিল। সরোজের দৃষ্টি সে দিকে মোহন (১ম)-২১