পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমার বিয়ে ৩২৭ মোহন ঘোষণা করিয়া ঠিক নির্ধারিত সময়ে এক বিবাহ-লোলুপ বৃদ্ধ জমিদারকে হত্যা করিয়াছিল। কিন্তু সেদিনের সহিত আদ্যকার ব্যাপারের আকাশ-পাতাল প্রভেদ আছে। সেদিন মোহন প্রকাশ্যে ঘোষণা করিয়াছিল এমন এক কাজ করিবার জন্য যাহার বিরুদ্ধে পুলিস ও গভর্নমেন্ট দণ্ডায়মান হইলেও জনসাধারণের মৌন-সম্মতি এবং সামর্থ্য তাহার পক্ষে ছিল এবং পুলিসও কঠোর হস্তে দসু্য মোহনকে দমন করিতে চাহিলেও তাহার কার্যকে নিছক দস্যু-জন-সুলভ বলিয়া ভাবিতে পারে নাই। কিন্তু এক্ষেত্রে সে যেরমণীকে বিবাহ করিতে চাহে, সেই রমণীর যদি সম্মতি থাকিত, তবে বহু পূর্বেই সে স্বকার্য সাধন করিতে পারিত। কিন্তু তাহ হয় নাই। সুতরাং মোহন যে আবার বলপূর্বক মিস সোমকে লইয়া যাইতে চাহিবে, তাহাও সহজে বিশ্বাস করা যায় না। কিন্তু দসু্য মোহনকে আমি চিনি। সে ভুলিয়াও মিথ্যা কথা কহে না। সুতরাং সে যখন প্রকাশ্যে ঘোষণা করিয়াছে, মিস রমা সোমকে সে প্রাণ অপেক্ষা ভালবাসে, তখন সেই নারীকে অন্যের পত্নী হইতে সহজে দিবে কি-না, ইহাও এক সমস্যা। আর একমাত্র এই কারণেই আমাকে এত সাবধানতা অবলম্বন করিতে হইয়াছে। মিঃ স্যানিয়েল নীরবে দাড়াইয়া চিন্তা করিতেছিলেন; এমন সময়ে কম্যানডিং অফিসার আসিয়া অভিবাদন করিয়া কহিলেন, “কিছু নতুন খবর আছে, স্যার?” মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, না। তবে আপনারা খুব সতর্ক হয়ে থাকবেন। কারণ মোহনের মত ধূর্ত আর দ্বিতীয় আছে কি-না আমার জানা নেই।” কম্যানডিং-অফিসার হাসিয়া কহিলেন, “বুলেটের কাছে সব ধূর্তমিই বোকা বনে যায়, স্যার।” - “তা ঠিক—কিন্তু বুলেট যদি তাকে দেখতে না পায়।” বলিয়া মিঃ স্যানিয়েল মৃদু হাস্য করিলেন। ক্রমশঃ জনতা বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। তাহদের পুলিস-বেষ্টনীর নিকটে আসিতে দেখিয়া কম্যানডিং-অফিসারের আদেশে সওয়ার-পুলিস চার্জ করিয়া জনতাকে বহু দূরে সরাইয়া দিল। জনতা মুখর হইয়া উঠিল। & সন্ধ্যা হইল। বিবাহের লগ্ন রাত্রি ৯টায়। মিঃ সোম অত্যন্ত ভীত ও উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিতে লাগিলেন; তিনি বার বার ঘড়ির দিকে চাহিতে লাগিলেন রমার মুখ দেখিয়া ধারণ করা শক্ত যে, কোন চিত্তা তাহার মনটিতে আলোড়ন তুলিতেছে। ডাঃ গুপ্তের মুখে এতটুকু চিন্তা বা ভয়ের চিহ্ন ছিল না। তিনি প্রশান্ত মুখে রমরিদিকে চাহিয়া দেখিতেছেন। সরোজ একবার ঘর ও অন্যবার বাহির হইয়া ঘুরিতেছিল। ম্যাজিস্ট্রেট কর ও তাহার পরিবারবর্গ কোন অজ্ঞাত কারণে নিমন্ত্রণ রক্ষা করিতে অক্ষমতা প্রকাশ করিয়াছেন। অবশ্য সেজন্য ভুরি ভুরি মার্জনা ভিক্ষাও করিয়াছেন। যত রাত্রি হইতে লাগিল, ততই জনতার সমাবেশ ও কলরব বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। সময় কাহারও জন্য অপেক্ষা করে না। অবশেষে রাত্রি ৯টা বাজিল। পুরোহিত মন্ত্র পাঠ করিতে লাগিলেন। মিঃ সোম বাহিরের দিকে দৃষ্টি-নিবদ্ধকরিয়া ইষ্ট-মন্ত্র জপ করিতে লাগিলেন। যথাবিহিত আচার ও অনুষ্ঠানের ভিতর মন্ত্র পাঠ করিয়া ডাঃ অরুণ গুপ্ত ও কুমারী রমা সোম উভয়ে পুত বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হইয়া স্বামী-স্ত্রীতে পরিণত হইলেন।