পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন অমনিবাস כאי 8סי . (4) পরদিন প্রাতে, তখনও আটটা বাজে নাই, বিলাস দ্বারদেশ হইতে স্বর যতদূর সম্ভব মোলায়েম করিয়া কহিল, “রায়বাহাদুর এসেছেন, কর্তা।” মোহন দ্রুতপদে উঠিয়া দাড়াইল। কহিল, “চা’ আর খাবার নিয়ে আয়। আমি যাচ্ছি।” চাহিয়া দেখিতেছেন। ঈষৎ হাসিমুখে এবং নত হইয়া নমস্কার করিয়া কহিল, “বসুন, রায়বাহাদুর।” i রায়বাহাদুর একখানি ছবি দেখিতেছিলেন; চমকিত হইয়া ফিরিয়া দাড়াইলেন এবং প্রতি-নমস্কার করিয়া কহিলেন, “আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন ?” “আমার ধৃষ্টতা মার্জনা করবেন, রায়বাহাদুর। আমার যাওয়াই শত গুণে সঙ্গত ছিল, কিন্তু আমার স্ত্রী অত্যন্ত পীড়িত, সে জন্য এই কষ্টটুকু দিতে বাধ্য হলাম। আপনি আমাকে....” প্রবলভাবে অর্ধপথে মোহনকে বাধা দিয়ে রায়বাহাদুর কহিলেন, “ওসব কি বলছেন কুমার বাহাদুর? আমার কত সৌভাগ্য যে আপনার মত ব্যক্তি আমাকে স্মরণ করেছেন। আমি তো আপনার নীচেই থাকি। পাঁচ মিনিটের পথও নয়। তাছাড়া আপনার গুণ-গান প্রত্যহ এত বেশি করে শুনি যে, একবার দর্শন ক’রে ধন্য হবার জন্য কতবার ইচ্ছা করেছি, কিন্তু প্রত্যেকবারেই সংশয় ও দ্বিধা এসে আমাকে নিরস্ত করেছে।” মোহন কহিল, “বসুন।” রায়বাহাদুর উপবেশন করিয়া কহিলেন, “আপনিও বসুন কুমারবাহাদুর। তারপর রানী মার কি অসুখ ?” নেই।” রায়বাহাদুর কহিলেন, “আজকার কাগজে আপনার সহৃদয় বদান্যতার কথা পাঠ ক’রে অবধি, আমি একবার আপনাকে দেখবার জুন্য অধীর হয়েছিলাম। আপনাদের মত মহাপ্রাণ মোহন অতিমাত্রায় বিস্মিয় হইয়া কহিল, “আজ কাগজে আবার কি বার হয়েছে?” “আপনি দেখেননি? আশ্চর্য এ্যামেচার পুলিস ক্লাবের সেক্রেটারি মহাশয় যে আপনার হাজার টাকা দানের প্রাপ্তি-স্বীকার করে, সারা জগতের সম্মুখে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।” মোহনের মুখে মুহুর্তের জন্য উদ্বেগ পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। এই মুহুর্তটুকুর মাঝেই তাহার মনের উপর নানা সম্ভাবনার ছবি ফুটিয়া উঠিয়া বিলীন হইয়া গেল। এই কৃতজ্ঞতা-প্রকাশের সংবাদ যে, কতদূর অবধি সুদূরপ্রসার ফল লাভ করিতে পারে, তাহার আভাসও তাহার মুখে বিদ্যুতের মত খেলিয়া গেল। সে হাসিমুখে কহিল, “এ সব ভারি অন্যায় রায়বাহাদুর।” “অন্যায়।” অকস্মাৎ রায়বাহাদুর তাহার অভ্যস্ত উচ্চহাস্যে ভাঙ্গিয়া পড়িলেন। হাসির বেগ কমিলে কহিলেন, “কুমার, এমন অন্যায় করবার সুযোগ যদি একটু ঘনঘন পাওয়া সম্ভব হতো তা হলে এই জগতটা বাস করবার পক্ষে আরও একটু রমণীয় হয়ে উঠত। কিন্তু এমনি দুর্ভাগ্যের বিষয় যে, আমরা জীবনে এই দুটি সুযোগ ছাড়া আর দেখবার কোন সুযোগই এল না।” - * -