পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○ br মোহন অমনিবাস মিঃ বাসু অদম্য আগ্রহভরে পত্ৰখানি পাঠ করিতে লাগিলেন। পত্ৰখানি আমরা নিম্নে উদ্ধৃত করিলাম ঃ– - “মাই ডিয়ার মিঃ বেকার, সংবাদ-পত্রে আপনি আস্থার মূল্য নির্ধারণ করে যে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন তা’ দেখে সুখীও হ’লাম যত, ব্যথিত হলামও তত। সুখী হলাম এই ভেবে যে, এতদিন পরে আপনার ধৃষ্টতার প্রতিফল দেবার সুযোগ পেলাম। আমার স্ত্রীকে গুলি করার মত আপনার দুঃসাহস এইবার চুর্ণ করতে পারব ভেবে মন আমার আনন্দে নৃত্য করে উঠল। আর ব্যথিত হলাম এই দেখে যে, আমার শিরে মূল্য—দসু মোহনের শিরের মূল্য মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা করেছেন দেখে। অন্ততপক্ষে লক্ষ টাকা হ’লেও কিছু সাত্ত্বনা পাওয়া যেতো। যাক, সকলের পরিমাণ-জ্ঞান তো সমান নয়। আপনার বোধ হয় স্মরণ আছে কিছুদিন পূর্বে আমি দিল্লী ডেলি নিউজ পড়ে চিঠিতে লিখেছিলাম যে, আমি শান্তি চাই, নিরঙ্কুশ নিরবচ্ছিন্ন শান্তি। আমি কাউকে উত্যক্ত করব না, অপরেও যেন আমাকে উত্যক্ত না করে। আমার তখনকার মনের অবস্থা বর্তমানের চেয়েও কম শাস্তি-প্রয়াসী ছিল। বর্তমানে আমি অখণ্ড শাস্তির প্রত্যাশী। আমি বলতে চাই যে, আমার দ্বারা জগতের কোন সৎব্যক্তির কণামাত্রাও ক্ষতি হবে না। যদি কেউ আমাকে অযথা উত্যক্ত না করে, আমার অস্তিত্ব পর্যন্ত বিশ্বের দৃষ্টি হইতে সংগোপনে রাখতে প্রস্তুত আছি। আপনি জানেন, আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। শ্রদ্ধা করি এই জন্য যে, মাত্র আপনিই একবার মোহনকে—তা’ যে কোন কারণ বশতঃই হোক—গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু ধরে রাখতে পারেন নি। গতবারে সেই দৈব অনুকূল-ভরা সুযোগ পেয়েছিলেন বোলে যদি এবারো সাহস আপনার উজ্জীবিত হয়ে থাকে, তবে এখনও সময় আছে, আপনি আমার পথ ছেড়ে সরে দাঁড়ান। জীবনের সায়াহ-সময়ে আর নিজের মৃত্যু ত্বরান্বিত করবেন না। যাক, এইবার শুনুন। আমি এক্ষেত্রে আপনার সঙ্গে দেখা করবার সুযোগ গ্রহণ করলাম না। কারণ আমি ভেবে দেখলাম, আপনাকে সরে দাঁড়াবার একটা সুযোগ আমার দেওয়া প্রয়োজন; তাই ইচ্ছা থাকলেও, আমাকে অনিচ্ছুক মনে, দুঃখিত অন্তরে নিরস্ত হতে হ’ল। কিন্তু যদি দেখি আপনি আমার সহৃদয় ইচ্ছা-ভরা পত্রকে উপেক্ষা দেখিয়েছেন, তা হলে অনতিবিলম্বেই আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবার বাসনা রইল। কিন্তু কবে কোথায় তা' আজ আর জানালাম না, পরে জানতে পারবেন। Ng আর একটা কথা বলে পত্র শেষ করতে চাই। শুনলাম, আপনি আমাকে গ্রেপ্তার করবার জন্য মাত্র তিন মাসের সময় গভর্নমেন্টের কাছে থেকে নিয়েছেন। এ কথাটা সত্য কিনা জানতে ইচ্ছে হয়। কারণ এত বড়ো নির্ভরতা আপনার নিজের শক্তির ওপর কবে থেকে হ’ল, আমাকে তা জানবার সুযোগ পর্যন্ত দেননি। যদি সত্যই এই হয়, তবে আপনার জন্য সত্যই আমার দুঃখ হচ্ছে; তিনটা মাস সময় মোহনকে, দসু মোহনকে গ্রেফতার করবার জন্য প্রচুর ভাবতে সক্ষম হয়েছেন ভেবে সত্যিই আমি মর্মাহত হয়েছি। তিন মাস কেন, তিনটি জন্ম ফিরে এলেও, আপনি আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমার দেখা পাবেন না, একথা বোঝবার সময় কি এখনও আপনার হয় নি।