পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার মোহন \EWS & করব কাকে শুনি? তোমরা দসু মোহনকে জেনেছ, মানুষ মোহনকে দেখ নি, জানো নি। তোমরা জেনেছ বিশ্বাস করেছ, দসু মোহনকে ধনী-ত্রাস, মোহন সমাজের দুষ্ট গ্রহ। কিন্তু তোমরা দরদী মোহনকে, দীনবন্ধু মোহনকে, অনাথের নাথ মোহনকে দেখা নি, জানো নি, এমন কি জানবার চেষ্টা মাত্রও করো নি। আমি করেছি, তাই আমি চিনেছি। আজ তাই আমার এই জীর্ণ বুকটা মোহনের জন্য, রমার জন্য, আমার রমা দিদির জন্য হাহাকারে ভরে গেছে। আমার সব চেয়ে এই দুঃখ বেশী হচ্ছে, আমি গতকাল অন্ধ হয়েছিলাম, চেনার শক্তি নিঃশেষে হারিয়েছিলাম। নইলে....” রায়বাহাদুরের চক্ষু হইতে দ্বিধারা অশ্রু-প্রবাহ নামিয়া আসিল। তিনি উত্তরীয় প্রান্তে কহিলেন, “যে বোনটি আমার চক্ষুর সম্মুখে ব্যাধশরে আহত হরিণীর মত লুটিয়ে পড়েছিল, যার মুখে মৃত্যুর ছায়া গভীর ভাবে আঁকা দেখে সব আশা ত্যাগ করেছিলাম, আজ সেই যখন মৃত্যুর রহস্যময় ঘনান্ধময় যবনিকা তুলে জীবনের উজ্জ্বল আলাতে এসে দাঁড়াল, এতখানি অথর্ব অক্ষম, অকর্মণ্য আমি, ঠিক তখনই আমি তাকে চিনতে ভুল করলাম! কি করলাম আমি প্রফুল্ল!” প্রফুল্লকুমার এই অপূর্ব শোকোচ্ছাসের সহিত পূর্ব সংলগ্ন ইতিহাস কিছুই জানিতেন না, সুতরাং তিনি কি বলিবেন, কি করিবেন, বুঝিতে না পারিয়া কহিলেন, আপনার ভুলও তো হতে পারে। পাহারাদার সিপাই কি মোহনের নাম করেছিল ?” রায়বাহাদুর অকস্মাৎ তপ্ত হইয়া কহিলেন, “বোকার মত প্রশ্ন করো না, প্রফুল্ল। একজন বাইরের লোকের কাছে গভর্নমেন্টের সিপাই গুপ্ততথ্য প্রচার করবে এই কি তোমার মত উচ্চপদস্থ কর্মচারীর উপযুক্ত প্রশ্ন? তারা শুধু এইটুকু বললে, ডাকু ভাগা। আপ কোন হ্যায়।” আমি বললাম, হামি যে হই, সে হই, ডাকু নেহি বাবা কিন্তু তারা তা শুনবে কেন ? শেষে জন্ম কুষ্ঠি-ঠিকুজি জেনে নিয়ে, এখানকার অর্থাৎ আগ্রার ঠিকানা টুকে নিয়ে, ডাকরামাত্র হাজির হবার নোটিশ দিয়ে তবে ছেড়ে দেয়। প্রফুল্লকুমার ভীত স্বরে কহিলেন, “এখানকার ঠিকানাও দিয়েছেন?” ২ রায়বাহাদুর অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইতে গিয়া প্রফুল্লকুমারের মুখের দিকে চাহিয়া অকস্মাৎ অট্টহাসে ভাঙ্গিয়া পড়িতে লাগিলেন। প্রফুল্লকুমার এই অহেতুক হাসির কোন অর্থ না একখানি নাম লেখা কার্ড—রায়বাহাদুরের হাস্য-মুখর মুখের দিকে একবার চাহিয়া— টেবিলের উপর রক্ষা করিল। কহিল, “একজন সাহেব দেখা করতে এসেছেন, হুজুর।” প্রফুল্লকুমার কার্ডখানি তুলিয়া পাঠ করিলেন। তাহার মুখাভাব গম্ভীর হইয়া উঠিল। তিনি রায়বাহাদুরের অশ্রুসিক্ত হাস্যময় মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “আঃ দাদু, থামুন। মিঃ বেকার দেখা করতে এসেছেন। দেখুন দেখি, ঠিকানা দিয়ে কি বিপদে পড়লেন।” মিঃ বেকারের নাম শুনিয়া রায়বাহাদুরের হাস্য প্রবাহ নিঃশেষে রুদ্ধ হইয়া গেল। তিনি অতিমাত্রায় চকিত হইয়া ভৃত্যকে কহিলেন, “কোথায় তিনি ? যাও, এখানে নিয়ে এস।” রায়বাহাদুরের মন তিক্ত হইয়া উঠিল। তিনি ঘৃণাপূর্ণ দৃষ্টিতে আত্মীয় চাকুরের দিকে