পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার মোহন WC) বাধা দিয়া রমা কহিল, “এতদিন কৃপণ ধনীদের ধন লুণ্ঠন ক’রে অনাহারী দরিদ্রদের মুখে আহার জুগিয়েছ। যদিও ও-কাজ পাপ কাজ, তুকও ভগবান তোমাকে মার্জনা করেছেন বোধ হয় এই ভেবে যে তুমি নিঃস্বার্থ হয়ে পরের জন্যে কাজ করেছ। কিন্তু এবার... সহসা রমা নীরব হইলে মোহন কহিল, “শেষ করো, রানী!” এবার তুমি দেশের গভর্নমেন্টের ভান্ডার লুঠ করতে চলেছে। হয়তো এতদিন গভর্নমেন্ট তেমন আন্তরিক ভাবে তোমার সঙ্গে শক্রতা করেন নি, কিন্তু এইবার যে-রোষে রুদ্রের বিষাণের মত আমাদের ওপর ভেঙ্গে পড়বে, তা’ থেকে রক্ষা পাবার শক্তি তোমার আছে, একথা যে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনে গো!” মোহন হাসিয়া উঠিল এবং সস্নেহে প্রিয়তমা নারীকে আপন বাহু পাশে বাধিয়া কহিল, “তুমি কেন বার বার ভুল করছ যে, আমি তোমাকে স্পর্শ করে শপথ করেছি, কোন অন্যায় কাজ আমি করতে পারি না। তবে ?” এমন গভীর অবসাদের ভিতরেও রমার মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল। সে কহিল, “কারেন্সি-অফিস লুঠ করা কি অপরাধ নয়, তোমার আইনে ?” মোহন হাসিল; হাসিতে হাসিতে কহিল, “মুখে যে-হাসি ফুটেছে ও হাসি যদি আবার নিবে যায়, তাহলে ঘোরতর অন্যায় হবে, রানী।” এমন সময়ে দ্বারের বাহির হইতে বিলাস কহিল, “কর্তা।” “কে রে বিলাস? আবার কি বাবা।” মোহন সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিল। “একটা কথা নিবেদন করতে ভুল হয়েছে, কর্তা।” এই বলিয়া বিলাস নতমস্তকে কক্ষের ভিতর প্রবেশ করিয়া দাড়াইল। মোহন কহিল, “এইবার ভুল সংশোধন করো, বাবা!” বিলাস মুখভাব যথাসম্ভব গম্ভীর ও স্বর কোমল করিতে চেষ্টা করিয়া কহিল, “আপনার মোটর গাড়ীটা নিয়ে এসেছি।” মোহন যুগপৎ বিস্মিত ও আনন্দিত হইয়া কহিল, “বলিস কিরে, বাবা! গাড়ী খানাযে পুলিসের কাছে ছিল! নাঃ দেখছি তুই আমাকে ডোবাবি। বল কি হয়েছিল? জানতাম, কর্তা? তাই যখন কলকাতায় এলুম ভাবলুম দেখে যাই গাড়ীখানা কোথায় মোহন হসিয়া কহিল, “থাকবে আর কোথায়? আমার গ্যারেজে সীল করা ছিল তো।” বিলাস তৎক্ষণাৎ ঘাড় নাড়িয়া জানাইল, “হুজুর, গিয়ে দেখি, একজন সিপাই একটা লাঠি হাতে ক’রে বসে আছে। রাত তখন আটটা কি এগারোটা হবে।” । বিলাস বলিতে লাগিল, “আমি সিপাই বাবাজীর সঙ্গে গল্প করতে করতে এক সময় তা’কে বেঁধে ফেললুম। তারপর চাবি ভেঙ্গে গাড়ী বার করে তেল ভরে চলে এলুম।” বিলাস এমন ভাব দেখাইল, যেন যে-কাজ সে করিয়াছে তাহা অতীব সহজ এবং কিছুমাত্র বিপদের সম্ভাবনাও কোথাও নাই।