পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন Տ : উঠিয়া দাড়াইল এবং নীলরতনবাবু যে পর্যন্ত না উপবেশন করিলেন, তাহারা দাড়াইয়া রহিল। নীলরতনবাবু উপবেশন করিয়া কহিলেন, “কি খবর, বরেন্দ্র ?” বরেন্দ্ৰ কহিল, “হরেন আর আমি পরামর্শ করছিলুম যে, কৃষ্ণপুরের মেঘা পালোয়ানকে তার দলবল সমেত এই কয়দিনের জন্য ভাড়া করলে হয় না? মেঘার মত পালোয়ান এ জেলাতে আর দ্বিতীয় নেই, তা’ তো জানেন? সে একা একটা দাঙ্গা ফুরিয়ে নেয়। মোহনের মত বাবু দসু্যকে সে বগলে পুরে, সুগ্ৰীব যেমন গন্ধমাদনের সঙ্গে সূর্যকে রামচন্দ্রের কাছে ধোরে এনেছিল, তেমন কোরে ধোরে আনতে পারে।” - হরেন্দ্র বিজ্ঞের হাসি হাসিয়া কহিল, “দূর মূখ সুগ্ৰীব সূর্য বগলে পুরেছিল, না জাম্বুবান পুরেছিল রে? তোর যদি শাস্ত্র-জ্ঞান এতটুকুও থাকতো।” বরেন্দ্র তাহার পাণ্ডিত্যের অপমানে ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিল;কহিল, “জাম্বুবান না আরও কিছু? আচ্ছা, বাবুকেই জিজ্ঞাসা কর।” নীলরতনবাবু অন্য সময় হইলে মোসাহেবদ্বয়ের সহিত এইরূপ আলাপে আনন্দ বোধ করিতেন, কিন্তু যার মৃত্যু-তারিখ নির্ধারিত হইয়াছে, তিনি শত ভরসা পাইয়াও শাস্ত হইতে পারিতেছিলেন না। কহিলেন, “তোমরা দুজনেই সমান পণ্ডিত। কারণ ঐ বীরত্বের কাজ সুগীব করিয়াছিল কি জাম্বুবান করেছিল যদি আমাকে মীমাংসা করতে হয়, তবে আমার সাধ্যে তা’ কুলোবে না। কারণ আমি শুনেছিলাম হনুমানই ওই বীরত্বটুকু দেখিয়েছিলেন। কিন্তু থাক ও কথা, যদি মেঘাকে তোমরা আনতে চাও, বেশ তাকে আর তার দলকে আজই ঠিক কোরে এসো-গে। আমার কোন আপত্তি নেই।” সেক্রেটারী প্রবেশ করিয়া কহিল, “আশুবাবু দুবার এসে ফিরে গেছেন।” শশব্যস্তে জমিদার কহিলেন, “কি বলেন তিনি?” “অর্থহীন উদ্বেগ প্রকাশ করেন শুধু। এই নিন কমিশনারের গোপনীয় পত্র এসেছে।” সেক্রেটারী পত্ৰখানি জমিদারের হাতে দিল। নীলরতনবাবুপত্ৰখানি পাঠ করিয়া কহিলেন, “যাক্ এবার আমি নিশ্চিন্ত হলুম। কমিশনার করে তুমি। কাল সকলে আটটার মধ্যে আমার মোটর নিয়ে স্টেশনে যাবে। সঙ্গে দুজন দারোয়নকে নেবে। মিঃ স্যানিয়েলকে মহা-সমাদরে খাতির কোরে নিয়ে আসবে।” সেক্রেটারী কহিল, “যে আজ্ঞা।” ప్ర్ర সেক্রেটারী বাহির হইয়া গেলে, বরেন্দ্র কহিল, “আমার স্ত্রী বলছিলেন, বাবুর বিপদ তা জান, কিন্তু তুমি যে আহার নিদ্রা ত্যাগ কোরে আধখানি হয়ে যাচ্ছ, এর মানে তো আমি বুঝতে পারি নে। পুরুষ মানুষ তোমরা, তোমাদের আবার ভয়টা কিসের শুনি? পুরাকালে যে নারী-হরণ নিয়ে এক একটা কুরুক্ষেত্র বেধে যেত, তার কি?” হরেন্দ্র নীরবে শুনিতেছিল;কহিল, “তুই কি বললি?” “আমি তাকে বললুম, “তুই মেয়েছেলে, তুই পুরুষেব কথা জনবি কি?” তাতে তিনি কি বললেন, জানিস? বললেন, “আমি পুরুষেব যত বিদ্যা-বুদ্ধি জানি, তুমি তোমার জ্ঞাতি ভাইদের খবর তার সিকিও জানো না।’ শুনলি হরে, আমার স্ত্রীর জ্ঞান আর বিদ্যে কি রকম?” বরেন্দ্র গর্বিত দৃষ্টিতে চাহিল। ***