পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার মোহন ՎԶե-Տ “এইবারটির মত তুমি আমাকে মার্জনা করো। বল, করেছ?” মোহন অপলক-দৃষ্টিতে রমার মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “তোমাকে মার্জনা করবার দুঃসাহস, শক্তি, স্পর্ধা আমার কি কখনও হবে, রানী? তোমার পবিত্র স্পর্শে আমার কুলষিত-জীবন ধন্য হয়ে উঠেছে। আমি আমাকে ফিরে পেয়েছি। আমার সর্বদা ভয় হয়, পাছে এমন কোন কাজ ক’রে ফেলি, যা তোমার মনে আঘাত দেয়। তা’ হ’লে আমাকে যে-শাস্তি ভোগ করতে হবে, কোন পরম পীড়কের আইনেও তা জানা নেই।” রমা ক্ষণকাল অভিভূত ভাবে স্বামীর আলিঙ্গনে ধরা দিয়ে ধীরে ধীরে উঠিয়া বসিল। কহিল, “দোকানের মালিক যতবারই মহারাজা বলে ডাকতে গেছেন, ততবারই তোমার প্রবল ভাবে বাধা দেওয়া দেখে, আমার একবারের জন্য তোমার ওপর সন্দেহ হয়েছিল, এর মত দুঃখের আমার আর কিছু নেই। আমি ভাবি, আমি তোমার উপযুক্ত কোন দিনই হতে পারব না। তোমার মত মহৎ, তোমার মত উদার, তোমার মত স্নেহময় স্বামী পাওয়া যায় কত জন্ম তপস্যার জোরে, তা’ আজ যেমন বুঝতে পারছি, পূর্বে কখনও পারিনি। আমার একটি ভিক্ষে আছে, রাখবে?” “ভিক্ষে, রানী? ছিঃ তুমি দাবি জানাও—আমি যদি সমর্থ হই, না বলব না। কিন্তু একটা কথা—না থাক। কি দাবি, রমা ?” রমা কহিল, “আমাকে একা রেখে তুমি কলকাতা যেতে পাবে না।” বলিতে বলিতে রমার স্বর কম্পিত হইয়া উঠিল। মোহন কহিল, “একটা কথা সদা সর্বদা তোমার মনে রাখতে হবে যে, তুমি দস্য মোহনের স্ত্রী। মোহন কোন দিন সাধারণ মানুষের মত জীবন যাপন করতে পারবে না। যেদিন সে সময় তা’র হবে, সেদিন সে হবে মৃত। রমা।” “বলো।” রমা ধীর স্বরে কহিল। “তুমি তো ইতিহাস আমার শুনেছ? তুমি তো জেনেছে, এই সব আভিজাত্যের জঘন্যতম অত্যাচারের কাহিনী? তুমি তো জানো—কত অত্যাচার, অনাচার প্রতিটি মুহূর্ত দরিদ্রের, অসহায়ের বক্ষ-রক্ত রঞ্জিত করে তুলছে, তবে আমি শাস্ত হবো কি ক’রে? আমি শাস্তি ভিক্ষে করেছিলাম সত্যি,কিন্তু সে শান্তি অক্ষমের বীর্যহীনের শান্তি নয়—আমি চেয়েছিলাম সকলের শাস্তি। তা পাইনি, দুঃখ নেই। কিন্তু যখনই অনাচারে অত্যাচারে পীড়িত মানবের আহ্বান আমার কানে আসবে রম, তখনই আমি প্রাণপণ করে ছুটে যাবো। পৃথিবীর কোন বাধা, কোন প্রতিবন্ধক আমার পথে দাঁড়াতে দেবো না।” এই বলিয়া মোহন ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া পুনশ্চ বলিতে লাগিল, “আজ চলেছি এমন এক অন্যায়ের প্রতিকার করতে যে অন্যায়ের ক্ষত আমার বুকে তীব্র জ্বালা সৃষ্টি করেছে, তা’র প্রতিশোধ নিয়ে নিজেকে আরোগ্য করতে চাই। অন্যায়—যাকে সত্যিকার অন্যায় কাজ বলে তা আর—এ জীবনে আমার দ্বারা হবে না, রমা।” “আর তো সময় নেই, রানী! আসছে দশ তারিখে আমার প্রতিজ্ঞা সফল করতেই হবে।” মোহন স্নিগ্ধ হাস্য মুখে কহিল। রমার মুখে ভীতি পরিস্ফুট হইয়া উঠিল; সে বহুক্ষণ নতমুখে বসিয়া থাকিয়া কহিল,