পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

old মোহন অমনিবাস হরেন্দ্ৰ কহিল, “তাহলে কথা এই দাঁড়াল যে, তোর স্ত্রী বহু পুরুষের ঠিকুজী কোষ্ঠি সংগ্রহ করেছে, কেমন?” বরেন্দ্র রাগিয়া গেল। কহিল, “তোর মত মূখের দৌড় আর কত দূর হবে? আমি যা বলেছি, বাবু বুঝেছেন।” হরেন্দ্ৰ কহিল, “আমিও বুঝেছি, তোর স্ত্রীরও বুঝেছে। কি অদৃষ্টই না করে এসেছিল বরেন, যে আমন স্ত্রী-ভাগ্যে সৌভাগ্যবতী তুই ?” বরেন্দ্র উচ্চ হাস্য করিয়া কহিল, “মূখের ব্যাকরণ জ্ঞান কত। সৌভাগ্যবতী আমি ? বেশ বলেছিস, হরেন্দ্র। বেঁচে থাক বাবা।” নীলরতন এই সস্তা ভাড়ামোয় বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “ওসব বন্ধ রাখো তোমরা। আমার কিছু ভাল লাগছে না। এই যে এসেছেন? আসুন। কি সংবাদ বলুন তো?” আশুতোষবাবু প্রবেশ করলেন ও একখানি চেয়ারে উপবেশন করিয়া কহিলেন, “আমার খবর সবই ভাল। কিন্তু আপনার খবর নেবার জন্য ছুটে ছুটে আসতে হচ্ছে। ফটকের পুলিস তো আমাকে কিছুতেই ঢুকতে দিতে চায় না। শেষে সেক্রেটারীবাবু অনুমতি দেন, তবে আসতে পারি। ভাল এক বিপদ হয়েছে!” নীলরতনবাবু কহিলেন, “এই কটা দিন একটু সহ্য করতে হবে। কারণ দসু তো সাধারণ ব্যক্তি নয়! সংবাদ-পত্রে তার ভীষণ কাহিনী পড়েছেন তো?” - “হা, সেই কথাই তো বলতে এসেছি। মাধু মা আমার ভয়ে কাপতে কাপতে আমার হাতে বাঙলার ডাক কাগজখানা দিয়ে বললে, “বাবা পড়ুন, কি ভয়ানক দসটা—দেখুন।' আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললুম, তারপর আমার মাথা বো করে ঘুরে উঠল। আর একটু হ’লেই জ্ঞান হারাতুম, শুধু মেয়েটার ভীত মুখের দিকে চেয়ে সামলে নিলুম।” নীলরতনবাবু সবিস্ময়ে কহিলেন, “আপনি কি সংবাদ-পত্র নেন?” “রামচন্দ্র! আশু দে এমন বে-হিসেবী কোনকালেই নয়, বাবু! মেয়েটা কোথা থেকে পেয়েছে তা জিজ্ঞাসা করতে বললে, পাশের বাড়ী থেকে চেয়ে এনেছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, এখন বিশেষ রকম বন্দোবস্ত না করলে তো চলবে না।”আশুতোষবাবু গন্তরমুখে কহিলেন। যখন দায়িত্ব নিয়েছেন, তখন আমাদের নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত হওয়াই উচিত।” আশুতোষবাবু সোল্লাসে কহিলেন, “দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি?” জোর করিয়া মৃদুহাসিয়া জমিদার কহিলেন, “হাঁ। আর এই দায়িত্ব দেওয়ার অর্থ বোঝেন তো! আমার জীবন, আমার প্রাসাদ আগামী কাল থেকে সম্পূর্ণ পুলিসের দায়িত্বে ন্যস্ত হবে। সুতরাং আমার দিক থেকে আর কোন বন্দোবস্ত, কোন আয়োজনের প্রয়োজন হবে না।” হরেন্দ্র ও বরেন্দ্র একসঙ্গে পকেট হইতে অতি মলিন রুমাল বাহির করিয়া নাড়িতে নাড়িতে কহিল, “হিপ হিপ হুররে। হিপ হিপ হুররে!” নীলরতনবাবু বিরক্ত হইয়াও এই দুইটি কুকর্মের সহচরের অতীত কার্যকলাপ ভাবিয়া মনের কথা প্রকাশ করিলেন না; শুধু কহিলেন, “তোমরা একটু শাস্ত হয়ে বসো। আমি কথা শেষ কোরে নিই।”