পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ა V মোহন অমনিবাস “রোগীর জ্ঞান আছে?” কমিশনার মৃদু স্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন। চিকিৎসক কহিলেন, “ছিল, কিন্তু উপস্থিত নেই। রোগের যে-সব লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে, সে-সব যেমন অদ্ভুত, তেমনি হতবুদ্ধিকর। আমাদের মনে হয়....” এই বলিয়া তিনি সহসা নীরব হইলেন। - # কমিশনার নিঃশব্দে ফিরিয়া মিঃ বেকারের গম্ভীর মুখের দিকে চাহিলেন। মিঃ বেকার কহিলেন, “কি মনে হয় ?” চিকিৎসক এক মুহুর্ত দ্বিধা না করিয়া কহিলেন, “যদিও আমরা শেষ অবধি আশা ত্যাগ করি না, তবুও আমাদের মনে হয় রোগীর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক।” কহিলেন, “মোহনের স্ত্রীকে একবার সংবাদ দেওয়া উচিত। নয় কি, মিঃ বেকার?” মিঃ বেকার তৎক্ষণাৎ কহিলেন, “আমিও সে কথা ভেবেছিলাম, স্যার। আমি এখনই মিসেস গুপ্তাকে সংবাদ দেবার বন্দোবস্ত করছি। কিন্তু বড়ই দুঃখের বিষয়, স্যার, যে....” মিঃ বেকার তাহার বাক্য অসমাপ্ত রাখিয়া নীরব হইলেন। , শ্ৰীমতী রমা গভর্নমেন্টের নিকট হইতে সংবাদ পাইয়া অবিলম্বে আপন মোটরে চাপিয়া স্বামীকে দেখিতে জেল হাসপাতালে উপস্থিত হইল। তরুণী-বালিকার দুটি চক্ষু স্বামীর বিবর্ণ মুখের উপর ন্যস্ত হইয়া অবিরল ধারে অশ্রু-বর্ষণ করিতে লাগিল। নিয়মিত সময় অন্তে রমার মোটর যখন জেল-ফটক দিয়া বাহির হইতেছিল, তখন সেই বিপুল জনতা আর্তস্বরে মোহনের জয়-ধ্বনিতে আছাড় খাইয়া যেন খান খান হইয়া ভাঙ্গিয়া পড়িল। রমা দুই করতলে চক্ষু আবৃত করিল; মোটর বাহির হইয়া গেল। (২৯) কলিকাতা নগরীতে যেখানে যত শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ছিলেন, গভর্নমেন্ট অকাতরে অর্থব্যয়ে সকলের সহিত পরামর্শ করিয়া মোহনের প্রাণরক্ষা করিবার জন্য চেষ্টিত হইলেন। সারা ভারতবর্ষে একটা বিষাদের ছায়াপাত হইল। দসু মোহন সাধারণের মনে কোন সন্মানিত আসনে অধিষ্ঠিত ছিল, তাহা যেরূপ প্রাঞ্জলভাবে পরিস্ফুট হইল, সেরূপ ইতিপূর্বে কদাপি দেখা যায় নাই। - .ള് সকল প্রচেষ্টা অবশেষে ব্যর্থ হইল। পরদিন সন্ধ্যার অব্যবহিত পূর্বে দস্য মোহনের প্ৰাণ-বায়ু বহির্গত হইয়া গেল। গভর্নমেন্টের চিকিৎসক ঘোষণা করিলেন, “দসু মোহনের মৃত্যু হয়েছে।” “দসু মোহনের মৃত্যু হয়েছে”— এই সংবাদ ইলেকট্রিক কারেন্টের মত আচম্বিতে চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িল। কোথা হইতে কি হইল, বুঝিতে পারিবার পূর্বেই লক্ষ লক্ষ লোকের জনতা জেল-ফটকের সম্মুখে সমবেত হইল। কাহারও মুখে বিন্দুমাত্র শব্দ ছিল না। সকলেই শোকে, দুঃখে বিমূঢ় হইয়া পড়িয়াছিল। জনতার দিকে চাহিয়া মনে হইতেছিল, যেন ধরিত্রী তাহার প্রিয়তম সস্তানকে হারাইয়াছে, ধারিত্রীর প্রিয়তম পুত্রের শোকে সমগ্র জীব-জগৎ শোক-সাগরে মগ্ন হইয়াছে। বিরাট জন-সমাবেশ দেখিয়া গভর্নমেন্ট উৎকণ্ঠিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। কমিশনার