পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আবার মোহন 8 ՀԳ দাহ করিবেন। কিন্তু তাহাতে ব্যাঘাত ঘটিল। দসু মোহনের পত্নী শ্ৰীমতী রমা গভর্নমেন্টের নিকট কাতর প্রার্থনা জানাইল যে, তাহার স্বামীর মৃতদেহ তাহাকে দেওয়া হোক। সে হিন্দুধর্ম অনুসারে স্বামীর শেষকৃত্য সমাধা করিবে। সঙ্গে সঙ্গে উপরিওয়ালার সহিত কমিশনার এই বিষয়ে আলোচনা করিলেন। তাহাদের ভয় হইল, এই শোক-ক্ষিপ্ত জনতার হস্তে যদি দসু্যু-মোহনের মৃতদেহ পতিত হয়, তাহা হইলে কি যে ঘটিবে আর ঘটিবে না, তাহার কোন স্থিরতা নাই। কিন্তু মিসেস গুপ্তা যদি গুপ্তপথে শুধু তাহারই কয়েকজন আত্মীয়স্বজন দ্বারা মৃতদেহ শশানঘাটে লইয়া যাইবার প্রতিশ্রুতি দেন, তবে তাহার প্রার্থনা পূর্ণ করিতে গভর্নমেন্টের আপত্তি নাই। রমা তাহতেই স্বীকৃত হইল। সেদিন সন্ধ্যার পর মুষলধারে বৃষ্টি আরম্ভ হইল। কড়কড় ধ্বনিতে মেঘ গৰ্জন করিতে লাগিল। মনে হইল, ধরিত্রীর প্রিয়তম সস্তানের শোকে প্রকৃতি দেবীও যেন শোক-ক্ষিপ্ত হইয়া শোক-প্রকাশ করিতেছেন। এইরূপ দুর্যোগের ভিতর, কয়েকটি সবলকায় পুরুষ দসু মোহনের মৃতদেহ খাটে করিয়া স্কন্ধে তুলিয়া লইল এবং প্রেসিডেন্সি জেলের একটি গুপ্ত পথ দিয়া বাহির হইয়া পড়িল। এদিকে অপেক্ষায় অধীর, বারিপাতে সিক্ত, কম্পিত জনতা যখন মূহুমূৰ্হঃ শোক-ধ্বনি করিতেছিল, তখন সহসা শুনিতে পাইল, পশ্চাদ্দার দিয়া মৃতদেহ শ্মশান-ঘাটে চলিয়া গিয়াছে। সহসা প্রবল বন্যার তেজে বাঁধ ভাঙ্গিলে জল-প্রবাহ যেরূপ ভীমবেগে ধাবিত হয়, সেইরূপ বিপুল জনতা শ্মশানঘাট উদ্দেশ্যে ধাবিত হইল। প্রবল বৃষ্টির ভিতর ছয়জন ব্যক্তি মৃতদেহস্কন্ধে করিয়া দ্রতপদে প্রায় ছুটিয়া চলিতেছিল। তাহারা শহর ছাড়িয়া উপকণ্ঠে এক জঙ্গলের ধারে উপস্থিত হইল। সেখানে দুইখানি মোটর চারিদিক আবৃত করিয়া অপেক্ষা করিতেছিল এবং অদূরে একটি খাটে মৃতদেহ · পড়িয়াছিল। মোহনের মৃতদেহ সেখানে উপস্থিত হইলে একখানি অপেক্ষামাণ গাড়ীর ভিতর হইতে রম কহিল, “এসেছিস, বিলাস? নে বাবা, শীগগির ওঁর দেহ আমার গাড়ীতে তুলে দে।” না ?” @* বিলাস মৃতদেহ-বাহক ছয় জনের মধ্যে একজন; সে কিছু বলিবার পূর্বেই দ্বিতীয় মোটর হইতে একটি লোক বাহিরে আসিয়া কহিল, “আমি প্রস্তুত, দেবী। আমার দুমিনিটের বেশী সময় দরকার হবে না। তা’র মধ্যেই কর্তা বেঁচে উঠবেন।” রমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলিয়া কহিল, “উনি তো বৃষ্টিতে ভেজেন নি, বিলাস ?” “না, মা।” বিলাস সন্ত্রমস্বরে কহিল। চিকিৎসক মোহনের মোটরে প্রবেশ করিলেন। রমা পুনশ্চ কহিল, “এইবার তোমরা ওই মৃতদেহটাকে এই খাটে তুলে নাও। তারপর শ্মশানঘাটে গিয়ে যথারীতি দাহ ক’রে আজমীঢ় চলে এস। বুঝেছ, বাবা?”