পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

B Ա) Շ মোহন অমনিবাস দস মোহনের সেক্রেটারী প্রশাস্তের মুখে স্নান হাসি ফুটিয়া উঠিল। - মোহন ভূ-কুঞ্চিত করিয়া অসহ স্বরে কহিল, “বুঝি সব, প্রশান্ত। কিন্তু কি উপায় আছে আমার ? তুমি জান, আমি কখনও মিথ্যা কথা বলি না। আমাদের বিবাহের পূর্বে রানীর কাছে যে শপথ করেছি, তা’র আমি কিছুতেই নড়চড় করতে পারি না। আমার প্রচুর উপার্জনের পথ বন্ধ হয়েছে। শুধু এদের জন্যই আমার ডাকাতি-লব্ধ প্রত্যেকটি টাকা ব্যয় করেছি। তুমি জানো এই উপায়ে অর্জিত একটি পয়সা আমি নিজের জন্য ব্যয় করি না। আমি, ছদ্মনামে সাহিত্য-সেবা ক’রে, ছবি একে যা উপার্জন করি, তাতে আমার স্বচ্ছন্দে চলে যায়, উদ্ধৃত্তও হয়। কিন্তু সে উদ্ধৃত্ত এত অধিক নয়, যার দ্বারা আমি এই হাজার কহিল, “না প্রশাস্ত, আমি আর কোন পথই দেখতে পাচ্ছি নে।” " প্রশান্ত ক্ষুন্ন স্বরে কহিল, “এদের শান্ত করি কি দিয়ে ?” মোহন ক্ষণকাল চিন্তা করিয়া কহিল, “তুমি রানীর কাছে অভিযোগ জানাতে পার, প্রশান্ত।” - প্রশান্ত সন্ত্রম কষ্ঠে কহিল, “মা’র কাছে ?” “হা প্রশান্ত, হা। একমাত্র তিনিই তোমাকে—শুধু তোমাকে কেন, আমাকেও–পথ দেখিয়ে দিতে পারেন।” মোহন ধীর কষ্ঠে কহিল। কক্ষের সংযোগ-দ্বারের পরদা নড়িয়া উঠিল ; ধীর সংযত পদে রমা কক্ষে প্রবেশ করিল। প্রশাস্ত সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিয়া বাহির হইয়া যাইবার উপক্রম করতেই রমা নির্বিকারে স্বরে কহিল, “যাবেন না, প্রশাস্তবাবু, একটু অপেক্ষা করুন।” s রমা মোহনের সম্মুখে একখানি কোচে ধীরে ধীরে উপবেশন করিল। মোহন শশব্যস্তে সোজা হইয়া বসিয়া কহিল, “কেন কষ্ট করে নেমে এলে, রানী ?” আমাকে ডেকে পাঠালেই আমি হাজির হতাম।” রমা বাধা দিয়া মৃদু হাস্য মুখে কহিল, “প্রশাস্তবাবু আমি আপনাদের কথা শুনেছি। কিন্তু আমাকে বলতে পারেন, পৃথিবীতে কত দুঃখী, নিরাশ্রয় অথবা বিধবা আছেন?” প্রশ্ন শুনিয়া প্রশান্ত বিস্মিত হইয়া কহিল, “তার কি আর নির্ধারিত সংখ্যা আছে, মা?” “নেই।” রমা শাস্ত কষ্ঠে কহিল, “তবে সামান্য দু'এক হাজার দরিদ্রের কোন ব্যবস্থা হচ্ছে না বলে, ওঁকে আবার উত্তেজিত করা বা ওঁর মন খারাপ করে দেওয়া আপনার কি উচিত হচ্ছে, প্রশাস্তবাবু ? হা বুঝতাম যদি আপনি পৃথিবীর সকল দুঃখীর দুঃখ নিরাময় করতে পারতেন।” প্রশান্ত অতিমাত্রায় অস্থির হইয়া কহিল, “আমি তো ওঁকে উত্তেজিত করি নি, মা। ওই দেখুন, অতগুলি নিবেদন ওঁর কাছে এসে জমা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রভুর অভিমত জানাই কি আমার কর্তব্য নয়, মা ?” রমা প্রশাস্তের প্রশ্নের উত্তর না দিয়া কহিল, “তা’ ছাড়া একের ধন জোর করে নিয়ে, অপরকে দান করা যতই মহান কাজ ব’লে মনে হোক, ন্যায্য তো তা’ মোটেই নয়, উপরস্তু এটা গুরুতর অন্যায় এবং পাপ। ভগবানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানুষ মানুষের অভাব কখনও মেটাতে পারে কি প্রশাস্তবাবু ? এতদিন আপনারা অনধিকার চর্চা করেছিলেন।”