পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8בסי হয়েছে।” প্রশান্ত নত হইয়া অভিবাদন করিয়া দ্রুত পদে বাহির হইয়া গেল। রমা স্নিগ্ধ হাস্যে কহিল, “ওঁকে সরালে কেন শুনি ?” মোহন হাসিতে হাসিতে কহিল, “কারণ তর্কে যোগ দিতে পারছিলাম না ব'লে। রমা বিস্মিত চক্ষু দুটি মেলিয়া কহিল, “কি তর্ক করবার আছে?” “তর্ক নয় রানী, আমার অনুযোগ।” মোহন কয়েক মুহুর্ত পত্রের স্তুপটির দিকে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “রাশি রাশি অর্থের নেশায় উন্মাদ হয়ে যখন দুহাতে ধন বিতরণ করতে লাগলাম, তখন দিনে দিনে প্রার্থীর সংখ্যা হাজারে হাজারে বৃদ্ধি পেতে লাগল। এক-একটা প্রদেশে গেছি, সেখানেই হাজার হাজার দীন দরিদ্র এসে আমার চারিদিকে ভিড় ক’রে দাড়িয়েছে। তাদের চোখে, তাদের মুখে যে হতাশায় ছবি দেখেছি, দান পেয়ে সেই মুখচোখেই যে তৃপ্তির আলো লক্ষ্য করেছি, মনে হয়েছে আমি যেন লক্ষ লক্ষ জন্ম দস্যু মোহন হয়ে জন্মগ্রহণ করি। মানুষের তৈরী আইন-কানুন সমাজ-ব্যবস্থা—যা আমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাকেই—সবল হস্তে চূর্ণ করে ফেলেছি। ভেবেছি এসব অন্যায়, ঘোরতর জুলুম। একজন লক্ষ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রার ওপর শুয়ে আরামে দিন কাটাবে, আর অসংখ্য ব্যক্তি অনাহারে জীবন কাটাবে, এই যে ব্যবস্থা, এই যে মানুষের তৈরী আইন, এর চেয়ে ঘোরতর পাপ আর অপরাধ বিধাতার বিচারে আর কিছুতেই হতে পারে না। আমার এই বিশ্বাসই ধনীর দুঃস্বপ্ন আর দরিদ্রের আশার আলো বিকীর্ণ করে তুলেছিল। মোহন ক্ষণকালের জন্য নীরব হইল। রমা মুগ্ধ-দৃষ্টিতে স্বামীর উজ্জ্বল আলোময় মুখের দিকে হতবাক হইয়া চাহিয়া রহিল। মোহন পুনরায় বলিতে আরম্ভ করিল, “এমনি ক’রেই দিন কেটে যায়। পুলিসের দৃষ্টি এড়িয়ে, নানা দেশ ঘুরে বেড়িয়ে অজস্র অর্থ সংগ্রহ করেছি, বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠানে, লোকহিতকর প্রতিষ্ঠানে, অনাথা-বিধবাদের, অকর্মণ্য দীন-দুঃখীগণকে নিয়মিতভাবে সাহায্য দেবার ব্যবস্থা করেছি। তবুও অর্থের প্রাচুর্যতা বেড়েই চলেছিল। মাঝে মাঝে তীর্থস্থানে নিজ হাতে সাধু-সন্ন্যাসী ফকির দীন-দুখী-আতুরকে অর্থ বিলিয়েছি। একটি পয়সাও নিজের জন্য ব্যয় করিনি, রানী। আমার সাহিত্য-সেবা আর ছবি আঁকা থেকে যে অর্থ প্লাই, তার পরিমাণও বড়ো কম নয়, কিন্তু এতগুলি অনাথের জন্য তা কিছুই নয়to রমা কহিল, “ওগো আমি কি তোমার এসব কিছুই জানি না ? আমি যে সব জানি। আমার মত সৌভাগ্যবতী নারী আর যে একটিও নেই, তাও কি আমি বুঝি না ? মোহন প্রগাঢ় স্বরে কহিল, “এমনি একদিন তোমাকে দেখলুম। কোথায় গেল আমার আনন্দের ধারা, কোথায় পড়ে রইল আমার গর্ব। আমার মনে তখন এই কথাটাই বার বার জেগে উঠতে লাগল, “সবই বৃথা, সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি না তোমাকে পাই। কি হবে এই পশু-জীবন যাপন করে যদি না আমার সব চাওয়া সব পাওয়াকে পেলুম আমি ?” তোমাকে পেলাম রানী। অতীতের জীবন দুঃস্বপ্নের মত জাগরণের মাঝে খসে পড়ল। আমি কত সুখী, কাকে কি করে বোঝাব আমি। কিন্তু মানুষ বুঝি সর্বসুখী হতে পারে না, তাই আজ এই পত্রগুলি অনাথাদের তপ্ত হা-হুতাশ ভরে নিয়ে এসে আমাকে বুঝিয়ে