পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8\סיס টাকা পর্যন্ত জামীন হইতে চাহিয়াছিলেন, কিন্তু আদালত ও পুলিস-বিভাগ সম্মত হন নাই। পুলিস শ্ৰীঘ্রই চার্জ সীট দাখিল করিবে, ও বিচার আরম্ভ হইবে। ইহা লিখিয়া বন্ধু জানিতে চাহিয়াছেন, ডিফেন্স কিরূপ হইবে, কোন ব্যারিস্টার বা উকিল নিযুক্ত হইবে বা কি করিতে হইবে, তাহা যেন মিঃ সোম পত্রপাঠ কলিকাতায় গমন করিয়া বন্দোবস্ত করেন। এই গ্রেফতারের কাহিনী সারা-ভারতবর্ষের প্রত্যেকটি সংবাদপত্রে ঘোষিত হইল। অপরাধের গুরুত্বে কাহারও মনে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বা সংশয় রহিল না যে, বিচারের রায় কি হইবে। মিঃ সোম শয্যাশায়ী হইলেন। পুত্রবধূ কবিতা ভাবনায়, উদ্বেগে জরজর ও আকুল হইয়া শ্বশুরের পায়ের উপর অশ্রুসিক্ত মুখখানি রাখিয়া কাদিতে কাদিতে কহিল, “এ কি হ’ল, বাবা?” মিঃ সোম পুত্রবধুর অনুপম মুখখানির দিকে চাহিয়া বিহুল স্বরে কহিলেন, “আমিও ঐ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছি, মা। আমার সরোজ, আমার নির্মলচরিত্র পুত্রের নামে এমন জঘন্য অপবাদ, এমন দারুণ অভিযোগ সম্ভব হ’ল কি প্রকারে। আমার কি মনে হচ্ছে জানিস, মা? মনে হচ্ছে, বিধাতা নেই, ধর্ম নেই, কিছু নেই। আছে শুধু অবিচার, আছে শুধু অধৰ্ম, অন্যায় আর পাপের ধ্বজা। কি এমন গুরুতর অপরাধ করেছি যে, ভগবান কন্যাকে, আমার সর্ব গুণবতী কন্যাকে অপাত্রে দিলেন, তবু তার ক্ষুধা মিটল না, আমার দেবতুল্য পুত্রকেও নেবার আয়োজন করেছেন। বাঃ ! কি বিচার, কি সুন্দর বিচার।” শিক্ষিতা, তরুণী-বধূ কবিতা ভীত হইয়া কহিল, “আপনি শাস্ত হোন, বাবা। আপনি যদি এমন ক’রে ভেঙ্গে পড়েন, তা’ হ’লে তাকে বাঁচাবার আর যে কেউ নেই, বাবা।” পাগলের মত মাথা দোলাইতে দোলাইতে মিঃ সোম কহিলেন, “হা এইবার আমি শাস্ত হবো! চিরতরে শান্ত হবো। এমন শাস্ত কেউ কখনও জানে নি, কেউ কখনও শোনে নি। জানিস মা তুই? জানিস তুই, কেন আমার দুধের বাছাকে গ্রেফতার করিয়েছে? কে করিয়েছে, জানিস? জানিস না, না? আচ্ছা, আচ্ছা, পরে শুনবি, সব শুনবি।” কবিতা দুই হাতে মুখ চাপিয়া ফুকারিয়া কাদিয়া উঠিল। কহিল, “ও সব কি বলছেন, বাবা! আমার যে আর কেউ নেই, বাবা! আমার.” বালিকা আর বলিতে পারিল না। সহসা দ্বারের বাহিরে দ্রুত পদধ্বনি উত্থিত হইল ও সঙ্গে সঙ্গে, “বাবা,বাবা আমার” বলিতে বলিতে রমা আসিয়া পিতার দুই পায়ের উপর লুটাইয়া প্ৰড়িল। মিঃ সোম রমাকে দেখিয়া আনন্দের আতিশয্যে বিহুলের মত উস্মাদের দৃষ্টিতে চারিদিকে চাহিয়া, অস্থিরতা প্রকাশ করিতে লাগিলেন। কবিতা শ্বশুরের ভাব দেখিয়া রমাকে জড়াইয়া ধরিয়া কাদিতে কাদিতে কহিল, “এসেছেন দিদি, আপনি সত্যিই এসেছেন ? বাবা, বাবা, দিদি এসেছেন। চেয়ে দেখুন। মিঃ সোম পাগলের দৃষ্টিতে এক ভাবে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া, আনন্দের আতিশয্যে স্থির থাকিতে না পারিয়া, সহসা “রমা, রমা আমার!” বলিয়া প্রাণঘাতী একটা চীৎকার রমা ভ্রাতৃজায়ার দিকে চাহিয়া দ্রুতকষ্ঠে কহিল, “জল জল, বৌদি, শীগগির জল আনুন।” মোহন (১ম)-২৮