পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 80 (t হতভাগ্য বাপকে বিশ্বাস করতে পারবি তো মা ?” রমা অসহ বিস্ময়ে ভাঙ্গিয়া পড়িয়া কহিল, “ওসব আপনি কি বলছেন বাবা ? আমি আপনাকে মার্জনা করব, এমন কথা কি ক’রে আপনি বলছেন, বাবা ?” মিঃ সোম সহসা উঠিয়া কক্ষমধ্যে পায়চারি করিয়া ফিরিতে লাগিলেন। পুত্রবধূ কবিতা ও কন্যা রমা তাহার গম্ভীর মুখের দিকে চাহিয়া বসিয়া রহিল। রমা ভাবিতেছিল, কি হইয়াছে। সত্যিই কি হইয়াছে জানিবার জন্য নিশ্চিন্ত, শাস্তির নীড় ত্যাগ করিয়া এই যে আমি উন্মাদের মত ছুটিয়া আসিয়াছি, যাহা সম্পূর্ণ অসম্ভব বলিয়া ভাবিয়াছি, তাহা কি অবশেষে সত্যে পরিণত হইবে ? তবে কি দাদার গ্রেফতার কোন আকস্মিক বস্তু নহে ? রমার মন হতাশায় ভাঙ্গিয়া পড়িল। সে অভাগিনী ভ্রাতৃজায়ার দিকে চাহিতে দেখিল, তরুণী মেয়ের দুই সুকোমল কপোল বাহিয়া মুক্তাকারে অশ্রুমালা নামিয়া আসিতেছে। মিঃ সোমের পদচারণা সহসা বন্ধ হইল। তিনি সহসা উপবেশন করিয়া কহিলেন, “আমি মনস্থির করেছি, মা। সব কথাই তোদের জানাবো। যা সত্য নয়, যা কখনও সত্য হতে পারে না, যা আমি কোন দিন স্বপ্নেও আলোচনা করি নি, তেমন এক বিপদে আমি গত দশ বৎসর যাবৎ এক পিশাচের দ্বারা উৎপীড়িত হচ্ছি। সেই পিশাচ তিল তিল ক’রে রক্ত চুষে আমাকে অন্তঃসারশূন্য করে ফেলেছে। ওঃ ভগবান! আর পারি না আমি। রমা ?” রমা আকুল কষ্ঠে কহিল, “কি হয়েছে বলুন, বাবা।” “বলি মা, বলি। আমার বুকের ভিতরটা জুলে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। আমি এতদিন যে কথা চেপে রেখেছিলাম – আর পারি না, মা, পারি না।” বলিয়া মিঃ সোম শিশুর মত অধৈর্য হইয়া পড়িলেন। ইহার পর রমা অতি কষ্টে একটু একটু করিয়া, প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করিয়া, যাহা জানিতে পারিল, তাহা এই যে ঃ– গত ত্রিশ বৎসর পূর্বে যখন স্বদেশী আন্দোলন ও তাহার সহিত সন্ত্রাসবাদীদের আন্দোলন চরমে উঠিয়াছিল, সেই সময়ে মিঃ সোম মাত্র পচিশ বৎসরের যুবক। তিনি তখন কলিকাতায় থাকিতেন ও বেকার ঘুরিয়া বেড়াইতেন। সেই সময় সন্ত্রাসবাদীদের একটি দল তাহাকে উপযুক্ত ধনী-শিকার ভাবিয়া নিজেদের দলে টানিতে চেষ্টা করে। তাহার সম্মুখে নানা প্রলোভন উপস্থিত করে। সেই ক্ষুদ্র দলটির সভ্য-সংখ্যা মাত্র ১২ জন। তাহারা মৃত্যুপণ করিয়া একটি প্রতিজ্ঞা-পত্রে স্বাক্ষর করিয়া সভ্য হয়। যে কাগজের উপর এই প্রতিজ্ঞাপত্ৰ সম্পাদিত হয়, তাহা নরওয়ে হইতে বিশেষভাবে প্রস্তুত করিয়া আনা হইয়াছিল। সেরূপ মসৃণ ও পাতলা কাগজ কুত্ৰাপি দেখিতে পাওয়া যায় না। যে প্রতিজ্ঞা-পত্রে দ্বাদশ জন সভ্য নাম সহি করিয়াছিল, সেই পত্রে সহি করিবার জন্য মিঃ সোমকেও অনুরোধ করা হয়। কিন্তু প্রতিজ্ঞা-পত্রের ভাষা পাঠ করিয়া মিঃ সোম আতঙ্কিত হন এবং ভাবিয়া দেখিবার জন্য সময় চাহেন। তাহার পরদিনই পুলিস কর্তৃক দলটির গুপ্ত আড্ডা আবিষ্কৃত হয় এবং উক্ত দ্বাদশ জন সভ্য গা-ঢাকা দেন। অফিসের অন্যান্য কাগজ-পত্র এবং প্রতিজ্ঞা-পত্রটি একজন সভোর নিকট থাকিত। যদিও প্রতিজ্ঞা-পত্রে মিঃ সোম সহি করেন নাই বলিয়া তাহার দৃঢ় বিশ্বাস আছে, তবুও অন্যান্য কাগজ-পত্রে তাহার নাম রেজিষ্ট্রি করা হইয়াছিল। এদিকে যে