পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8Վ)Գ পিশাচের দাবি ক্রমেই বাড়তে থাকে, শেষ অবধি তোকে পর্যন্ত দাবি করে।” রমা আতঙ্কে অস্ফুট চীৎকার করিয়া উঠিল। মিঃ সোম ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া বলিতে লাগিলেন, “যদি না মোহন তোকে আমন অপ্রত্যাশিত ভাবে বিবাহ করত, তবে মা, শেষ অবধি দুষ্ট হয়ত তার দাবী পূরণ করতে আমায় বাধ্য করত। কিন্তু তোর আকস্মিক বিবাহ দিলে দুষ্টুকে উন্মাদ করে। তার দাবির বহর এমন বেড়ে গেল যে, তা’ মেটাতে হ’লে আমাকে সর্বস্বাস্ত হতে হয়। অবশেষে কোন উপায় না দেখে, যে-কথা আমি এতদিন সংগোপনে রেখেছিলাম, সেই কথা সরোজকে বলতে বাধ্য হই। সরোজ সব শুনে ধূর্তকে শান্ত করবার জন্য দশ হাজার টাকা নিয়ে কোলকাতায় যায়। তারপর সেখানে কি হয়েছে যার ফলে সরোজ দুষ্টুকে গুলি ক’রে মারতে যায়, তা’ বোঝা আমার সকল কল্পনার বাইরে।” রমা এতক্ষণে বুঝিল। সে ক্ষণকাল নীরবে থাকিয়া কহিল। “দাদার সঙ্গে কি রিভলভার ছিল, বাবা ?” হা, মা। সঙ্গে অতগুলো টাকা ছিল বলে, সাবধানের জন্য সঙ্গে নিয়েছিল।” “এখন তবে উপায়, বাবা ?” রমা হতাশ স্বরে প্রশ্ন করিল। মিঃ সোম একবার পুত্রবধুর দিকে চাহিয়া কন্যার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করিয়া কহিল, “বৌ-মা ও সেই প্রশ্ন আমাকে করেছিল, আমি উত্তর দিতে পারি নি, মা। তোর জন্যই তখন আমার সকল শোক উথলে উঠেছিল। তখন আমি ভেবেছিলাম, কেন ভেবেছিলাম এখন আর মনে পড়ে না মা, তুই থাকলেই আমার সকল দুর্ভাবনা দূর হয়ে যেত। কিন্তু তুইও যদি ওই প্রশ্ন করিস, মা, তবে আমার অবস্থা কি হবে?” মিঃ সোম হতাশভাবে বিছানার উপর শয়ন করিলেন ও চক্ষু মুদিত করিলেন। কবিতা ধীর স্বরে কহিল, “আপনি মুখে চোখে জল দেবেন আসুন, দিদি। একটু ঠান্ডা হন, তারপর আপনি এসেছেন, আর আমার কোন ভাবনা নেই।” রমা পূর্ণ দৃষ্টিতে এই নব-পরিণীতা বধুটির দিকে চাহিল। তাহার মন বেদনায় টনটন করিয়া উঠিল, একটা দীর্ঘশ্বাস বাহিরে আসিবার জন্য প্রাণপণ আলোড়ন তুলিতে লাগিল। সন্ধ্যার সময় সমুদ্রের বালুর উপর মিঃ সোম কন্যা ও পুত্রবধুর সহিত তিনখানি চেয়ারে বসিয়া কথা কহিতেছিলেন। মিঃ সোম কহিলেন, “তুই একা একা এলি, রমা?” “না, বাবা। উনি আমাকে পৌছে দিয়ে গেলেন।” রমনত স্বরে কহিল। মিঃ সোম স্নান স্বরে কহিলেন, “আমার বিরাগের ভয়ে এল না বোধ হয় ?” “হাঁ বাবা।” রমা নত স্বরে কহিল। মিঃ সোম চিন্তামগ্ন হইলেন। রমা পুনরায় কহিল, “উনি আপনার মার্জনা আর আশীৰ্বাদ না পেলে আপনার সম্মুখে কোন দিনই আর আসবেন না বাবা।” “মার্জনা আর আশীবাদ। আশীর্বাদ তা’কে আমি করছি, মা। সে যেন বেঁচে থাকে। তোর হাতের নোয়া যেন অক্ষয় হয়। কিন্তু মার্জনা আমি করতে পারি কি ভাবে তোরা বলতে পারিস ?” মিঃ সোম পর্যায়ক্রমে কন্যা ও পুত্রবধুর দিকে চাহিলেন।