পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8 8 Տ হইতে পারেন, তাহা সত্যই বিস্মিত হইয়া ভাবিবার বস্তু। রমা গাড়ী হইতে অবতরণ করিয়া সশ্রদ্ধ-বিস্ময়ে আপন বাড়ীর দিকে চাহিয়া রহিল। মোহন গাড়ী হইতে অবতরণ করিয়া কহিল, “ভিতরে চল, রানী।” “এই বাড়ী আমাদের ? আমাদের বাড়ী ?” প্রিয়তমা পত্নীর বিস্ময়ে মোহন কৃতাৰ্থ হইয়া কহিল, “হ রানী, এই বাড়ী আমাদের। আজ বাড়ীও সার্থক হ’ল তোমার স্পর্শ পেয়ে।” খুললে ? কোচম্যান দেখে নি তো ?” “এই কোচও আমাদের, ম্যানও আমাদের। সুতরাং দেখলেও আমাদেরই দেখেছে। এস।” মোহন অগ্রসর হইল। বাড়ীর মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র দুইজন পাচিক ছুটিয়া আসিল এবং তাহদের কত্রীকে অভিবাদন করিয়া সসন্ত্রমে দাড়াইয়া রহিল। সমূহের ও কারুকার্য-ভরা সুরুচিসম্পন্ন স্তম্ভগুলির দিকে চাহিয়া দেখিতে লাগিল। রমার চোখে-মুখে আনন্দ-দীপ্তি ফুটিয়া উঠিল। তাহার মুখ হইতে বাহির হইল, “সুন্দর। চমৎকার!” মোহন স্নিগ্ধ দৃষ্টিতে রমার দিকে চাহিয়া নতস্বরে কহিল, ‘ওরা এত সুন্দর ছিল না, রানী। তোমার দৃষ্টির স্পর্শে ওদের রূপ প্রাণ পেয়েছে।” রমা মধুর হস্যে নিম্ন স্বরে কহিল, “দুষ্টু!” শয়ন-কক্ষে প্রবেশ করিয়া রমা স্তম্ভিত হইয়া গেল। অতি ধনবানের কন্যা, ইউরোপে শিক্ষা-প্রাপ্ত তরুণীর চক্ষুকে বিস্ময়-বিহুল করা বড়ো কম কথা নহে। তবুও মোহনের অদ্ভুদ কল্পনার সমন্বয়ে তাহাও সম্ভব হইল। মানুষকে বাচিতে হইলে যে এইরূপ ভাবে ভোগ করিতে হয়, তাহ রমার সদূর-প্রসারী কল্পনাও ধারণা করিতে পারিল না। রমা ক্ষণকাল মূক দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “তুমি যে এত বড়ো, এমনি মহান তাতো জানতাম না ?” ડેડ চোখ তুমিই ফুটিয়ে দিয়েছিলে, রানী। নীচে নীল সমুদ্র,উপরে নীলাকাশ মধ্যে মধ্যমণির মত তুমি দাঁড়িয়ে আমাকে পলকহার করে তুলেছিল। সেই দিন সেই মুহূর্ত থেকেই আমার মনের ঘুমন্ত সৌন্দর্য পাপড় মেলে জেগে উঠল। আমি রূপে, রসে, গন্ধে মোহিত হয়ে গেলুম। আমার মনে সর্বদা এই অনুভূতির শিখা জুলতে লাগল, মনের ব্যাকুলতা আমাকে তাড়নায় তাড়নায় অস্থির করে তুললে। আমার সকল প্রচেষ্টা তোমাকে স্মরণ করে। শেষে এই প্রাসাদের ভিতর, বিশেষ ক’রে এই শয়ন-মন্দিরে, আমার মনের ছায়া-কায়ার রূপ লাভ করলে। এতদিন দেবী-মুর্তি তৈরী হয়ে পড়েছিল, আজ হল তার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা।” রমা মুগ্ধ-দৃষ্টিতে মোহনের দিকে চাহিয়া কহিল, “তুমি আমাকে এত ভালবাসলে কেন ? আমার ভয় হয়, আমার এত সুখ বুঝি সহ্য হবে না।” রমা স্বামীর দুটি আবেগ-ব্যাকুল বাহুবন্ধনে ধরা দিল। তাহাদের স্বপ্ন কতক্ষণ স্থায়ী হইত বলা যায় না, কিন্তু সহসা প্রতিবন্ধক আসিয়া রমাকে