পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8 BW。 সমুদ্রের গাড় কৃষ্ণবর্ণ উচ্ছল জলরাশি, ঢেউয়ের মাথায় ফসফরাস জুলিতেছে, গভীর গর্জনে সমুদ্র আলোড়িত হইতেছে। যতদূর দৃষ্টি চলে অষ্টমীর চন্দ্র-কিরণ বারিধির বক্ষে শুধু স্বপ্ন-মায়া বিস্তার করিয়া মানুষের সৌন্দৰ্য-বোধকে শতগুণে মহনীয় করিয়া তুলিতেছে। ক্ষণকাল পলকহীন চোখে রমা ও মোহন চাহিয়া থাকিল। মোহন কহিল, “এস রানী, বসা যাক ৷” উভয়ে উপবেশন করিবার পর রমা কহিল, “এত সুখ আমার অদৃষ্টে বিধাতা লিখেছিলেন যদি, তবে এমন অশান্তি দিলেন কেন ?” একটা দীর্ঘশ্বাস বাহিরে আসিয়া মোহনকে সচকিত করিয়া তুলিল। মোহন কহিল, “এইবার বল, রানী।” রমা ধীরে ধীরে একটি একটি করিয়া ভ্রাতা ও পিতার কাহিনী বিবৃত করিল। মোহন একটি কথাও না বলিয়া নীরবে, একাগ্র-চিত্তে শুনিতে লাগিল। রমা যখন তাহার কাহিনী শেষ করিল, তখন তাহার দুটি পদ্ম-চক্ষু অশ্রুতে ভাসিয়া যাইতেছে। - মোহন অতি যত্নে রমার চোখ ও মুখ অশ্রু-মুক্ত করিয়া কহিল, “এখন ?” রমা কহিল, “এখন তুমি জান। আমি বলেই খালাস। এখন তুমি হতভাগীর দাদাকে বাঁচাতে চাও, আমার চিরদুঃখী বাবাকে সুখী করতে চাও, হতভাগিনী তরুণী বৌদিকে স্বামী-সুখে সৌভাগ্যবতী করতে চাও—পারো, তুমিই তা’র বিচারক। আমি তোমার ইচ্ছা পালন করেছি, এখন তুমি আছ আমার, আর তারা আছে আমাদের মুখ চেয়ে।” মোহন শাস্তস্বরে কহিল, “কিন্তু তুমি তো জান রানী, আমি আর কিছুই করতে পারি না। তোমাকে ছুঁয়ে শপথ করে—ও-সব চিরতরে ছেড়ে দিয়েছি।” রমা উচ্ছসিত ক্ৰন্দন ভারে ভাঙ্গিয়া পড়িয়া কহিল, “ওগো জানি, আমি সব জানি। তুমি যে এই একটা তুচ্ছ নারীকে এতখানি ভালবাস, তাকে ছুয়ে শপথ করেছ বলে তুমি আর পথ দেখতে পাচ্ছ না, এসবই তোমার মহত্ত্বের পরিচয়। কিন্তু ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়াতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে আমি তো কোনদিন তোমাকে নিষেধ করি নি।” দসু, তস্কর, ধনীর ধন লুঠ করে, অনাথ, দুঃস্থদের বিলিয়ে দিয়েছি। আমি সমাজের ছাড়া সকলেই আমাকে আন্তরিক সমর্থন জানিয়েছে। তবু তো আমি দস্য ভিন্ন আর কিছুই নই, রানী।” রমা স্বামীর ক্রোড়ে মাথা রাখিয়া কিছু সময় নীরবে থাকিয়া কহিল, “তুমি যদি দসু্যু হও, তুমি যদি অস্পৃশ্য হও, তবে আমি যেন জন্মে জন্মে তোমার মত দস্য, তোমার মত দৃষ্টিতে রমার মুখখানির দিকে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “রানী। তুমি যদি বল, এ-কাজ অন্যায় নয়, তুমি যদি একটিবারের জন্যও আমাকে শপথ থেকে মুক্তি দাও তা’ হ’লে যে দসু তোমার চোখের জল ঝরাবার হেতু হয়ে আজও বেঁচে রয়েছে, তাকে আমি একবার