পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 8Ե- মোহন অমনিবাস বৃহৎ-বপু রায়সাহেব একটা সুবৃহৎ চেয়ারের উপর অঙ্গ ঢালিলেন। তাহাকে অত্যন্ত শ্রান্ত দেখাইতেছিল। তিনি দেওয়াল ঘড়িটার দিকে একবার চাহিয়া হাতের রিস্ট-ওয়াচটার সহিত সময় মিলাইলেন; পরে একটা চুরুট ধরাইয়া টানিতে লাগিলেন। মোহনের ধারণা হইল যে, রায়সাহেব কাহারও জন্য অপেক্ষা করিতেছেন। এরূপ গভীর রাত্রে কে আসিবে, দেখিবার জন্য মোহনের মন চঞ্চল হইয়া উঠিল। সে নিঃশব্দে চাহিয়া বসিয়া রহিল। মোহনের অনুমানই সত্য হইল। আর একখানি মোটর থামিবার শব্দ শ্রুত হইল এবং সঙ্গে সঙ্গে ভারী জুতার শব্দ নিস্তব্ধ নৈশ আকাশে ধ্বনিত হইয়া উঠিল। যে ব্যক্তিটি রায়সাহেবের ড্রইং-রুমে প্রবেশ করিলেন, তাহাকে দেখিয়া মোহনের আর বিস্ময়ের অবধি রহিল না। সে দুই হাতে চক্ষু মার্জনা করিয়া পুনরায় চাহিল ; দেখিল তাহার ভুল হয় নাই। একজন মিনিষ্টার রায়সাহেবের সহিত দেখা করিতে আসিয়াছেন। মোহন দেখিল, হাতমুখ নাড়িয়া অতি দ্রুতবেগে মিনিষ্টার কিছু বলিতেছেন। রান্নাঘর হইতে ড্রইং রুমের দূরত্ব একটু বেশী হওয়ায় কথাবার্তার একটি শব্দও মোহনের শুনিবার উপায় ছিল না। কিন্তু মিনিষ্টারের মুখ-ভাব ও হাত নাড়া এবং অস্থিরভাবে ড্রইং-রুমের মধ্যে চক্রকারে ঘুরিয়া বেড়ানো দেখিয়া, মোহনের বুঝিতে এতটুকু কষ্ট হইল না যে, মিনিষ্টার ভদ্রলোক অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়াছেন। কিন্তু রায়সাহেব নির্বিকার নিষ্কম্প দেহে বসিয়া রহিয়াছেন। মাঝে মাঝে দুই একটি কথা বলিবার জন্য র্তাহার মুখ নড়িয়া উঠিয়া পুনরায় বন্ধ হইয়া যাইতেছে। অবশেষে মোহন দেখিল, মিনিষ্টার রায়সাহেবের হাত ধরিয়া অপেক্ষাকৃত শাস্ত ভাবে কি বলিতেছেন; মনে হইল, তিনি যেন রায়সাহেবকে মিনতি করিতেছেন। মোহন সবিস্ময়ে দেখিল, মিনিষ্টার ক্ষিপ্তের মত ঘুষি উঠাইয়া রায়সাহেবকে মারিবার উপক্রম করিয়াই, পুনরায় কিছু বলিলেন, শেষে পকেট হইতে একতারা নোটের বান্ডিল বাহির করিয়া রায়সাহেবের দিকে ছুড়িয়া দিলেন এবং দ্রুতপদে কক্ষ হইতে বাহির হইয়া গেলেন। মোহন দেখিল, রায়সাহেব প্রফুল্ল মুখে নেটগুলি গণনা করিতেছেন। রায়সাহেব নোটগুলির গণনা শেষ করিয়া, তাহা একটি আয়রণ সেফে রাখিয়া দিলেন এবং পুনরায় রায়সাহেব অপেক্ষা করিতেছেন। মোহনের অনুমান সত্য হইল। পুনরায় অপর একটি মোটর-কার আসিবার শব্দ উথিত হইল। অল্প সময় পরে হাই হীল জুতোর ঠকঠক শব্দ করিয়া একটি বর্ষীয়সী মহিলা প্রবেশ করিলেন। তিনিও প্রথমে হাত-পা নাড়িয়া যেন বক্তৃতা করিতে লাগিলেন। অল্প পরে চক্ষুতে রুমাল চাপিয়া ক্ৰন্দন করিলেন, রায়সাহেবের দুটি হাত ধরিয়া মিনতি করিলেন। কিন্তু রায়সাহেব অটল, অচল হইয়া বসিয়া রহিলেন পরিশেষে হাতের ব্যাগ খুলিয়া কয়েক তাড়া নোট বাহির করিয়া রায়সাহেবের গায়ে ছুড়িয়া মারিলেন এবং বাহির হইয়া গেলেন। রায়সাহেব নোটের তাড়াগুলি কুড়াইয়া লইয়া হৃষ্টচিত্তে গণনা করিতে লাগিলেন। এই বর্ষীয়সী মহিলাকে মোহন চিনিত। ইনি কলিকাতার এক নামজাদা ধনী নাইটের