পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 3 B : পত্নী। মোহনের বিস্ময় প্রশমিত হইতে না হইতেই আবার একটি মোটর আসিয়া থামিল এবং অল্প সময় পরে একটি প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট ড্রইং-রুমে প্রবেশ করিলেন এবং দুইএকটি কথা বলিয়া একখানি চেক লিখিয়া দিয়া বাহির হইয়া গেলেন। মোহন বিস্ময়ে অভিভূত হইয়া পড়িল। সে বসিয়া বসিয়া গণনা করিয়া দেখিল দশজন নরনারী রাত্রি তিনটা অবধি একের পর এক আসিয়া রায়সাহেবকে অর্থ দিয়া গেলেন। সকলের আচরণ অল্প-বিস্তর একই রকম। প্রথমেই ক্রুদ্ধ হইয়া উঠেন, পরে মিনতি, পুনরায় ক্রোধ এবং অবশেষে পরাজয় স্বীকার করিয়া অর্থদানে পরিসমাপ্তি। নিদ্রায় মোহনের চক্ষু জড়াইয়া আসিতেছিল। সে দেখিল, সংগৃহীত সমস্ত অর্থ বাহির করিয়া রায়সাহেব পুনরায় গণনা করিতে ধসিলেন এবং সহসা কিছু মনে হওয়ায় ড্রইংরুমের দ্বার বন্ধ করিয়া দিলেন। মোহন বুঝিল, আদ্যকার কাজ শেষ হইয়াছে। সে উন্মুক্ত জানালাটি বন্ধ করিয়া দিয়া শয়ন করিল এবং অনতিবিলম্বে নিদ্রিত হইয়া পড়িল। (a) পাচিকা সোহাগীর আহানে মোহনের নিদ্রাভঙ্গ হইল। সে ব্যস্তভাবে উঠিয়া ব্যাগের ভিতর বিছানা ভরিয়া ফেলিল এবং সোহাগীর দিকে চাহিয়া কহিল, “রায়সাহেব উঠেছেন ?” সোহাগী কহিল, “চাকরের মুখে শুনলাম যে, তিনি ৯টার আগে উঠবেন না।” “উত্তম!” মোহন কহিল, “এক কাজ কর, রামকে কোন কাজে একবার বাইরে পাঠিয়ে দাও। আমি সেই ফঁাকে বেরিয়ে যেতে চাই।” মোহনের আদেশ মত সোহাগী রামচরণকে বাজারে পাঠাইয়া দিলে, মোহন সোহাগীর পিছনে আসিয়া খিড়কীর পথে বাহির হইয়া পড়িল। যাইবার পূর্বে বলিয়া গেল, “আমি আজ রাত্রি আটটার সময় আসব, যেন দরজা খোলা থাকে।” সোহাগী আবক্ষ-মাথা নত করিয়া কহিল, “যে, আজ্ঞে।” মোহন আপন সাময়িক-বাসস্থানে ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, বিলাস প্রাতভোজনের আয়োজন করিতেছে। মোহন প্রাতঃকৃত্য সারিয়া, স্নান করিয়া জলযোগ সারিয়া সংবাদপত্র পাঠ করিতে লাগিল। এক স্থানে দেখিল, রায়সাহেব অবিনাশ বাবু আততায়ীর গুলিতে প্রাণরক্ষা করিতে পারিয়াছেন বলিয়া ভগবানের চরণে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিয়া সম্পাদক লিখিয়াছে, রায়সাহেবের মত সদাশয়, সচ্চরিত্র ব্যক্তি হিন্দু সমাজের স্তম্ভম্বরূপ। এরূপ অমায়িক ব্যক্তিকে যে দুৰ্বত্তহত্যা করিতে চেষ্টা করিয়াছিল, যদি তাঁহার দোষ বিচারে সাব্যস্ত হয়, তাহার কার্যের গুরুত্ব হিসাবে আমরা যোগ্য দন্ড প্রার্থনা করিতেছি। মোহন ক্রুদ্ধ হইয়া কাগজখানি টুকরা টুকরা করিয়া ছিড়িয়া ফেলিল এবং তাহা জানালার ভিতর দিয়া উড়াইয়া দিয়া অস্ফুট কণ্ঠে কহিল, “এই বেয়াদব সম্পাদকটাকে চাবুকের ঘায়ে মোহন উচ্চ স্বরে ডাকিল, “বিলাস।” “এজ্ঞে যাই কর্তা।” বলিতে বলিতে বিলাস প্রবেশ করিল। মোহন কহিল, “খুব সাবধানে আছিস তো?” মোহন (১ম)-২৯