পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

E Այ মোহন অমনিবাস বাধা দিয়া মিঃ রায় কহিল, “লোকটা দেখতে কি রকম বলুন তো?” স্টেশন মাস্টার ক্ষুদ্ধ কষ্ঠে কহিলেন, “আবার আপনাকেও পুলিসের রোগে যদি ধরে তবে আর জীবন ধারণ করায় আমার সার্থকতা কী? আপনার জমিদার ৭৫ বৎসর বয়সে তরুণী ভাৰ্য সংগ্রহে মেতেছেন, সে জন্য তার বোমা, এরোপ্লেন, হাউইটজার, সাবমেরিন, ডেস্ট্রয়ার সবই হাসিমুখে সহ্য হবে;কিন্তু আমার অদৃষ্টটা একবার ভাবুন দেখি, মশায় ? কল্পনাশক্তি আছে তো? গৃহে এমন এক গৃহিণী আছে যার ভয়ে একটা পাঁচ বছরের মেয়েকেও আদর করবার উপায় নেই, অমনি ফোস কোরে উঠে বলবেন, বুঝি গো বুঝি, আমি আজই না হয় বুড়ী হয়েছি, চেরকাল আর এমন ছিলাম না! শুনলেন তো, মিঃ রায়? তবেই এমন যার জীবন, সে যদি আপনাদের প্রশ্নের পর প্রশ্নে দুএকটা কথা বলবারও ফুরসৎ না পায়, তবে মুখে পক্ষাঘাত ধরবে না? সেক্রেটারী রায় অধৈর্য স্বরে কহিল, “মাত্র একটা কথার জবাব দিন আপনি। লোকটা যুবক, না মধ্যবয়স্ক, না বৃদ্ধ ?” স্টেশন মাস্টার একবার অন্য দিকে চাহিয়া কহিলেন, “সিগন্যাল পড়েছে। পনেরো মিনিটের মধ্যে আপনার এক্সপ্রেস এসে পড়বে। তবেই ও-সব বাজে কথার জবাব দেবার সময় কোথায় পাবো বলতে পারেন? এই সেদিনের কথা, দরখাস্ত করেছিলাম। হেড অফিসে দরখাস্ত করেছিলাম যে, মাইনে না বাড়ালে আর আমার চলে না। আমার দেহ আচল হয়ে আসছে। জবাবে সাহেব লিখলেন, “আপনার দেহ অচল হয়ে আসছে বলতে কি বোঝাতে চান লিখে জানান!! শুনলেন মহাশয় বিদ্যের দৌড় সাহেবের? আমি লিখলুম, ‘আমার সংসার অচল হয়ে এলেই, আমার দেহও অচল হয়ে থাকবে, তাতে কি সন্দেহ আছে? কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন উচ্চবাচ্য নেই। তাই মনে করেছি যে, হয় মাইনে বাড়াবে, নয়......” স্টেশন মাস্টার কথা শেষ করিবার অবসর পাইলেন না; একজন চাপরাসী আসিয়া কহিল, “তার বোলাতে হে।” “ঐ শুনুন মশায়, ঐ শুনুন। একটা মিনিটও যে নিশ্চিন্ত হয়ে দুটাে কথা বলতে সহিত দ্রুতপদে প্রথম শ্রেণীর কামরার নিকট গিয়া দেখিলেন একটি মধ্যবয়স্ক ভদ্রলোক হাতে একটি এ্যাটাচি কেস লইয়া অবতরণ করিতেছেন।" ভদ্রলোক অবতরণ করিয়া এদিক-ওদিক একবার চাহিতেই মিঃ রায় অগ্রসর হইয়া সবিনয়ে কহিল, “আপনিই কি মিঃ স্যানিয়েল ?” ভদ্রলোকের মুখ হাস্যোজ্জ্বল হইয়া উঠল। তিনি কহিলেন, “ধন্যবাদ। আপনিই মিঃ রায়, সেক্রেটারী?” “হাঁ আপনার অনুগত ভৃত্য। বলিয়া মিঃ রায় অভিবাদন করিল। মিঃ স্যানিয়েল কহিলেন, “মোটর এনেছেন তো?” “আজ্ঞে হা। এদিকে আসুন।” বলিয়া মিঃ রায় অগ্রসর হইলেন। দ্বারবান দুইজন মিলিটারী সেলাম দিয়া বৃহৎ বংশদণ্ড স্কন্ধে পিছনে চলিতে লাগিল।