পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 G Հ মোহন অমনিবাস শহরের প্রতিটি পুরাতন স্মৃতির সহিত সাক্ষাতে তাহার মন উৎফুল্ল হইয়া উঠিতে লগিল। অবশেষে ট্যাক্সি যখন আদালত-প্রাঙ্গণে উপস্থিত হইল, তখন সে দেখিল আদালত লোকে লোকারণ্য হইয়া গিয়াছে। বহু নর-নারী এই মোকৰ্দমা ও আততায়ী যুবককে দেখিতে আসিয়াছিল। মোহন ট্যাক্সি হইতে অবতরণ করিয়া উপরে উঠিয়া গেল এবং চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্ট্রেটের বিচার-কক্ষের সম্মুখে উপস্থিত হইয়া দেখিল, শত শত লোক বাহিরে দাড়াইয়া রহিয়াছে; প্রহরী-সাজেন্ট দ্বার বন্ধ করিয়া দিয়াছে। মোহন এক মুহুর্ত চিন্তা করিল এবং দ্বিধাহীন গতিতে সাজেন্টের নিকট উপস্থিত হইয়া কহিল, “আমি আসামীকে জামিন দিতে এসেছি। দ্বার খোল, ভিতরে যাবো।” সাজেন্ট মোহনের সুন্দর অভিজাত-চেহারা দেখিয়া ও তাহার বিশুদ্ধ ইংরাজি কথা উচ্চরণের নৈপুণ্যে দেখিয়া বিনা-প্রতিবাদে দ্বার উন্মুক্ত করিয়া দিল; দসু্য মোহন ভিতরে প্রবেশ করিল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া মোহন দেখিল, সমস্ত কক্ষটি আইনজীবী ও সাধারণে পূর্ণ হইয়া গিয়াছে। তখনও ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আসেন নাই বা আসামীকে লইয়া আসা হয় নাই। মোহন ধীরে ধীরে অগ্রসর হইয়া কাঠগড়ার নিকটে এমন একস্থানে দাঁড়াইল যেখানে হইতে আসামীকে অতি স্পষ্টরূপে দেখা যাইবে ও হাকিমের প্রত্যেকটি কথা শুনা যাইবে। আদালত-কক্ষ শত শত লোকের কথায় মুখরিত হইয়া উঠিয়াছিল। এমন সময়ে ম্যাজিস্ট্রেট প্রবেশ করিলেন। সমস্ত গোলমাল ও কোলাহল নিঃশেষে থামিয়া গেল। মোহন দেখিল, সরোজ গত কয়দিনেই আধখানি হইয়া গিয়াছে। মুখ শুষ্ক, চুল রুক্ষ্ম ও চক্ষু বসিয়া গিয়াছে। দুর্ভাবনায়, দুশ্চিন্তায় চিরসুখী যুবকের মুখ বিমলিন হইয়া উঠিয়াছে। সরোজ কাঠগড়ায় প্রবেশ করিবামাত্র আকুল আগ্রহে চারিদিকে চাহিয়া প্রত্যেকটি লোকের মুখ দেখিয়া যাইতে লাগিল। তাহার মুখে চোখে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠিল। সহসা তাহার দৃষ্টি উৎপলের উপর পতিত হইয়া স্থির হইয়া রহিল। দেখিতে দেখিতে তাহার দুটি আয়ত-চক্ষু অশ্রুতে ভরিয়া উঠিল। ১৮ করিল। & মোহন দেখিল, অনতিবিলম্বেই সরোজের অশ্রু শুষ্ক হইয়া মুখ প্রফুল্প হইয়া উঠিয়াছে। তাহার মুখের উপর শাস্ত ভাব ফুটিয়া উঠিয়াছে। সে যেন নিশ্চিন্ত হইয়াছে। ম্যাজিষ্ট্রেট কয়েকটি প্রাথমিক কাজ শেষ করিয়া আসামী সরোজের কেস হাতে লইলেন। গভর্নমেন্ট-পক্ষের উকীল চার্জ-সীট দাখিল করিয়া একটি ছোট বক্তৃতা করিলেন। ম্যাজিষ্ট্রেট জানিতে চাহিলেন, “আসামী পক্ষের কোন আইনজীবী আছে কি না।” সঙ্গে সঙ্গে বারোখানি ওকালত-নামা হাতে লইয়া কলিকাতার তথ্য ভারতের বারোজন আইনজীবী, উকীল ও নামজাদা ব্যারিস্টারের দল দাড়াইয়া উঠিলেন ও ওকালত-নামা দাখিল করিলেন।