পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8QW。 ম্যাজিষ্ট্রেট বিস্থিত হইয়া একবার আইনজীবীগণের দিকে চাহিয়া আসামীর দিকে চাহিলেন। তাহার বিস্ময়ের হেতু এই যে, তিনি আসামীকে সাধারণ দসু ও খুনী ভাবিয়াছিলেন। কিন্তু যে বারোটি ওকালত-নামায় যে বারোজন বিশিষ্ট আইনজীবী সই করিয়াছেন, তাহদের একদিনের ফি ভাবিতেও সাধারণ ব্যক্তির আতঙ্ক উপস্থিত হয়। ম্যাজিষ্ট্রেট চার্জ ফ্রেম আসামী অবিচলিত কষ্ঠে কহিল, “নিদোষী।” ইহার পর আসামী-পক্ষের উকীলগণ আসামীর জামিনের জন্য দরখাস্ত করিলেন। র্তাহারা জানাইলেন, “যে-কোন অঙ্কের জামিন বিচারক চাহিবেন তাহা দিতেই আমরা প্রস্তুত আছি।” পুলিসের পক্ষ হইতে জামিনের দরখাস্তের প্রবল বিরোধীতা হইল। অনেক বাদানুবাদের পর বিচারক কহিলেন, “এক সপ্তাহ পরে শুনানীর দিন স্থির হ’ল। সেই দিন আসামী পক্ষের জামিনের জন্য দরখাস্ত বিবেচনা করে দেখব। ইতোমধ্যে আসামীকে জেল হাজতে পাঠানো হ’ল। সরোজের জামিন হইল না। তাহাকে পুনরায় হাজতে লইয়া যাওয়া হইল। সরোজ যাইবার পূর্বে কয়েক মুহুর্ত ধরিয়া মোহনের দিকে মৌন-দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। মোহন মৃদু হাস্য করিয়া তাহাকে বুঝাইতে চাহিল যে, “তোমার কিছুমাত্র চিন্তিত হইবার প্রয়োজন নাই। আমি তোমাকে উদ্ধার করিব।” আদালত হইতে বাহির হইয়া নীচে নামিয়া মোহন দেখিল, আদালত-প্রাঙ্গণের একাস্তে দাঁড়াইয়া মিঃ বেকার কয়েকজন অফিসারের সহিত আলাপ করিতেছেন। মোহন ক্ষণকাল অনির্দিষ্ট ভাবে ঘুরিয়া বেড়াইয়া আদালত হইতে বাহির হইয়া একটি ট্যাক্সিতে আরোহণ করিল। রাত্রি আটটার সময় মোহন রায় সাহেবের বাড়ীতে উপস্থিত হইয়া দেখিল, সোহাগী দ্বার মুক্ত করিয়া অপেক্ষা করিতেছে। মোহন জিজ্ঞাসা করিল, “রায়সাহেব বাড়ীতে আছেন?” সোহাগী কহিল, “না, তিনি আজ এক বন্ধুর বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গেছেন। বাড়ীতে খাবেনও না আসবেনও না।” వీ মোহন অত্যন্ত খুশী হইয়া কহিল, “আজ তুমি মোটা বকশিশ পাবে৮চল।” “সে আজ ছুটি নিয়ে বাইরে গেছে। কাল সকালে আসরে” সোহাগী জানাইল। মোহন আনন্দিত হইয়া মনে মনে ভাবিল, “এমন সুযোগ আর জীবনে আসবে না। আজ যেমন ক’রেই হউক সেই মহামূল্য প্রতিজ্ঞা-পত্র বার করতেই হবে।” এই কথা মনে মনে চিন্তা করিয়া মোহন প্রকাশ্যে কহিল, “ড্রইং-রুমে কি চাবি দেওয়া আছে ?” সোহাগী কহিল, “কোন ঘরেই চাবি নেই। রায়সাহেব ভাবেন, তার ঘরে চোর কখনও আসতে পারবে না। কোন সাহসে যে তিনি চাবি-বন্ধ না করে বাইরে যান ভেবে পাই না, হুজুর।” মোহন মৃদু হাসিয়া কহিল, “কিছু সরাতে পেরেছ ?” সোহাগী আধ হাত জিব কাটিয়া কহিল, “নেবার মত কোন জিনিসই নেই হুজুর। শুনি সাহেব পাঁচটা নগদ টাকাও ঘরে রাখেন না। যা কিছু সব ব্যাঙ্কে।”