পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3 & 8 মোহন অমনিবাস অন্ততঃ দু-পাঁচ টাকা ঘরে রাখেন। কিন্তু তা’র আগে এই দু’খানা নোট কাছে রাখ। আমি একবার ড্রইং-রুমটা দেখে আসি।” মোহন বাহির হইয়া গেল। সোহাগী লুব্ধ দৃষ্টিতে মোহনের দিকে চাহিয়া রহিল। তাহার দুটি ক্ষুদ্র চক্ষু ভরিয়া জঘন্য ক্ষুধা জাগ্রত হইয়া উঠিল। মোহন ড্রইং রুমে প্রবেশ করিয়া বিস্মৃত হইয়া গেল। দীর্ঘ মূল্যবান ভেলভেট স্কন দিয়া প্রত্যেকটি বাতায়নকে সমৃদ্ধ করা হইয়াছে। মেঝের উপর দামী, পুরু, সুবৃহৎ গালিচা বিছান রহিয়াছে। আধুনিক ফ্যাসানের বহুমূল্য আসবাব-পত্রে বৃহৎ কক্ষটি অতি সুরুচিসম্পন্ন ভাবে সজ্জিত। লিখিবার একটি বৃহৎ ও ক্ষুদ্র টেবিল রহিয়াছে। মোহন কক্ষ-মধ্যস্থলে দাঁড়াইয়া একবার চারিদিকে চক্ষু বুলাইয়া লইল, পরে জানালাগুলি বৃন্ধ করিয়া, বড়ো আলোটি জুলিয়া দিল, সারা কক্ষ আলোকবন্যায় ভাসিয়া গেল। কোথা রহিয়াছে ? কোন স্থানে হইতে আরম্ভ করিব ? এই চিন্তা মোহনের মনে উদয় হইল। সে ঘড়ির দিকে চাহিয়া দেখিল, মাত্র ৯ টা বাজিয়াছে। সম্মুখে সারা রাত্রি ভাবিয়া মোহনের মন উৎফুল্ল হইয়া উঠিল। সে প্রথমেই বড় টেবিলের একটা ড্রয়ার ধরিয়া টান দিল। ডালা খুলিয়া আসিলে মোহন দেখিল, একটি টর্চ রহিয়াছে। টর্চটি পরীক্ষা করিয়া দেখিল, ব্যাটারী কার্য করিতেছে। সে কিছু সময় চিন্তা করিয়া আলো নির্বাপিত করিয়া দিল ও দ্বার ভেজাইয়া দিয়া কার্য আরম্ভ করিতে যাইবে, এমন সময়ে কক্ষের বাহিরে জুতার অস্পষ্ট আওয়াজ শুনিয়া সচকিত হইয়া উঠিল ও একটা পর্দার অন্তরালে গিয়া দাঁড়াইল। মোহন ভাবিল, তবে কি রায়সাহেব ফিরিয়া আসিলেন ?? বিপদের সময়ে মোহনের ধৈর্য ও বুদ্ধি অটুট থাকে, ইহা বার বার প্রতিপন্ন হইয়াছে। এই ক্ষেত্রেও তাহার ব্যতিক্রম হইল না। সে পকেটে হাত ভরিয়া নিঃশব্দে দাড়াইয়া রহিল। কক্ষমধ্যে গভীর অন্ধকার। মোহন উৎকর্ণ হইয়া শুনিল, কয়েকজন লোক অতি ধীর পদে কক্ষে প্রবেশ করিতেছে। তাহারা প্রবেশ করিয়া দ্বার বন্ধ করিয়া দিল। মোহন চমকিত হইয়া চিন্তা করিল, তবে কি চোর আসিয়াছে ? রায়সাহেব বাড়ীতে নাই জুনিয়া তাহার যথাসর্বস্ব চুরি করিতে আসিয়াছে ?” of সহসা মোহন শুনিল, এক ব্যক্তি ধীর স্বরে বলিতেছে, “ই স্যার আমি শুনেছি, ওই দলিলখানা রায়সাহেব একটা কাচের গুলির মধ্যে রেখেছেন। গুলিটা ফাঁপা। আর দলিলখানা এমন মসৃণ কাগজে লেখা যে ভাজ ক’রে অতি অল্প জায়গায় অনায়াসে রাখা যায়।” একটি পরিচিত কষ্ঠ কহিল, “তবে গুলির সন্ধানই করা যাক, ঘোষ। তোমার টর্চ জ্বাল। বড় টেবিলটা আগে খুঁজে দেখি, এস।” মোহন নিঃসন্দেহে বুঝিতে পারিল, তাহার চির-শত্ৰু, প্রতিদ্বন্দ্বী মিঃ স্যানিয়েল ওই একই বস্তুর সন্ধানে আসিয়াছেন। নিশ্চয়ই মিনিস্টার তাহাকে এই কাজে লাগাইয়াছেন। মোহনের মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়া উঠিল। সে আরও ভাবিল, “এমন এক বস্তু—এমন এক ব্যক্তির নিকট রহিয়াছে, যাহার ফলে গভর্নমেন্টের মহাপ্রতাপান্বিত ও মহা-শক্তিমান মন্ত্রীও এরূপ দাসত্ব জীবনযাপন করিতে বাধ্য হইয়াছেন।” মোহন দেখিল,ইনটেলিজেন্স বিভাগের কতিপয় সূক্ষ্ম-মস্তিষ্ক টর্চ জুলিয়া নিবিষ্ট চিত্তে