পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন B G S. রায়সাহেব হাসিয়া উঠিলেন ; কহিলেন, “তুমি দস্য জীবন যাপন করছ। দিনের আলো তোমার চোখে জ্বালা ধরায়। রাত্রের অন্ধকারে তুমি পথ চল। তুমি সুসভ্য সমাজ-ব্যবস্থার, রাষ্ট্রের পরিচালন-দন্ডের মানশক্তির প্রচন্ডতা বুঝবে কি ক’রে ? আমার শক্তি কতদূর জানো, মোহন ? আমি মন্ত্রীদের ইচ্ছামত খেলিয়ে বেড়াই। আমি দেশের শাসক-শক্তির ভয়-ভাবনা-দুশ্চিন্তার স্থল। আমার সময় আগতপ্রায় বলতে তোমার জিহ্বা কেঁপে উঠত, যদি তুমি এই সব তথ্য জানতে।” মোহন নির্বিকার স্বরে কহিল, “আমি আরও একটু বেশী জানি, রায়সাহেব। আমি জানি আপনি একটি মহাপাপী, অতি নীচ, অতি পাষণ্ড শয়তানেরও অধম জীব। আপনি সমাজের, রাষ্ট্রের দুষ্টগ্রহ। আমার এই দুঃখ হচ্ছে, কেন আমি সর্বপ্রথমে আপনাকে চূর্ণ করে ফেলি নি! যার জীবিকা মানুষকে সদা-সন্ত্রস্ত রেখে ঠকিয়ে যাওয়া, তার মুখ-দর্শনেও মহা-পাতকের ভাগী হতে হয়।” রায়সাহেব ক্রুদ্ধ হইয়া মেঝের উপর জোরে পদাঘাত করিয়া গর্জন করিয়া কহিলেন, “দসু মোহন!” “হা, আমি দস্য মোহন! আমি দস্যু হয়েও সাধারণের পূজা পাই, সহানুভূতি পাই, কেন না আমি ব্ল্যাকমেলার নই। আমি পাপার্জিত ধন লুঠ ক’রে গরীবদের মুখে অন্ন তুলে দিই। আর আপনি?” মোহন মৃদু হাস্য মুখে অথচ দৃঢ় স্বরে কহিল। “জনিস দসু্য, তোর ঘৃণিত জীবন এক মুহুর্তে আমি শেষ করে দিতে পারি ?” উদ্যত রিভলভার হস্তে রায়সাহেব গর্জিয়া উঠিলেন। মোহন কহিল, “তবে আর শুভ কাজে দেরী কিসের রায়সাহেব ?” রায়সাহেব স্থির-দৃষ্টিতে মোহনের দিকে ক্ষণকাল চাহিয়া থাকিয়া কহিলেন, “না তোমাকে এমন সুখের মৃত্যু আমি দেব না, মোহন। আমি তোমাকে পুলিসের হাতে তুলে দেব। সারা জগৎ জানবে, আমি এমন একটা দুষ্টগ্রহ জগতের বুক থেকে উপড়ে ফেলতে সক্ষম হয়েছি, যার ফলে আমি রাজা-বাহাদুর পর্যন্ত হতে পারি। তোমাকে আমি পুলিসের হাতে দেব।” এই বলিয়া তিনি টেলিফোনের উপর হাত রক্ষা করিলেন। వీ মোহন মনে মনে উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিল। সে রায়সাহেবের স্বর শুনিয়া বুঝিল যে, তিনি মিথ্যা ভয় দেখাইতেছেন না। কিন্তু ইহার কবল হইতে মুক্তিরও কোন পথ দেখিতে না পাইয়া অতিষ্ট হইয়া উঠিল। ప్ర్ర সহসা রায়সাহেব কহিলেন, “কিন্তু একটা শর্তে আমি তে মুক্তি দিতে পারি এবং তুমি যার প্রাণ রক্ষা করবার জন্য আমার পিছনে লেগেছ সেই তোমার শ্যালক সরোজকেও মুক্তি দিতে পারি। সম্মত আছ, মোহন ?” মোহনে বিস্মিত হইয়া কহিল, “কি শর্ত ?” রায়সাহেব টেলিফোন হইতে হাত উঠাইয়া লইলেন এবং দক্ষিণ হস্তের রিভলভারটি মোহনের মস্তক লক্ষ্য করিয়া উদ্যত রাখিয়া কহিলেন, দাড়াও, আগে তোমার দীর্ঘ বিবেচনার পথ, আপত্তির পথ রুদ্ধ করি।” রায়সাহেব টেলিফোনের রিসিভার কানে লাগাইয়া কহিলেন, “হ্যালো মিস, লালবাজার প্লিজ।” ...”