পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করিল। বিলাস কহিল, “কোথায় যাব?” মোহন কহিল, “বাসায় চল।” হইলে, মোহন গাড়ী হইতে অবতরণ করিয়া কহিল, “গাড়ী গ্যারেজে তুলে আয়।” বিলাস গাড়ী লইয়া চলিয়া গেল। মোহন উপরে উঠিয়া দেখিল, তাহার একখানি পত্র আসিয়াছে। মোহন বাসা ঠিক করিয়া এক ছদ্মনামে পত্র পাঠাইবার জন্য রমাকে ঠিকানা জানাইয়াছিল। মোহন পত্ৰখানি ঠোটের উপর চাপিয়া ধরিয়া শিশুর মত আনন্দে লাফাইতে লাফাইতে শয়ন-কক্ষে প্রবেশ করিল এবং জুতাসমেত চিত হইয়া শয়ন করিয়া, পত্ৰখানি খাম হইতে বাহির করিয়া পাঠ করিতে লাগিল। আমরা পত্ৰখানি নিম্নে উদ্ধৃত করিয়া দিলাম। “প্রিয়তম, তোমার পত্র পেয়ে যে কিরূপ সুখী হয়েছি, তা কি ক’রে তোমাকে জানাব? তুমি শুধু বুঝতে পারবে, তোমার পত্রের আশায় কি রকম উদ্বেগে কাল কাটাই? আমার মন দিবারাত্র তোমার কাছেই পড়ে আছে, তা’ কি তুমি জান না। তুমি কি বোঝ না, আমার দিবা-রাত্রির স্বপ্ন কী ? আমার মত সৌভাগ্যবতী নারী জগতে যদি থাকে তবে তাকে আমি প্ৰণাম করি। আমার সর্বদা ভয় হয়, তোমাকে হারাব। কেন হারাব, তা জানি না। রাত্রে যখন একা অন্ধকাবের বুকে ডুবে থাকি, কিছুতেই ভাবতে পারি না, তুমি আমার কাছে নেই। কিছুতেই বুঝতে পারি না, পারি না, কেন এমন হয়, কেন আমি তোমাকে সারা দিন, সারা রাত, আমার মাঝে দেখতে পাই। তুমি কি জাদুতে আমাকে বশ করেছ, আমার জানতে ইচ্ছা হয়। গতকাল বাবার কাছে গিয়েছিলাম। তুমি হাত দিয়েছ শুনে তার চোখের জল শুষ্ক হয়েছে। কি গভীর শ্রদ্ধা তার তোমার শক্তির ওপর, তা’ আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না। তার দিন-রাত্রির এখন একটি মাত্র চিন্তা হয়েছে, ভগবান তোমাকে নিরাপদে রাখেন যেন। আমার দুঃখিনী বৌদি তোমার মঙ্গলের জন্য, তোমার সফলতার জন্য প্রতি অবসরে প্রার্থনা করেন। হতভাগিনীর চোখের জল দেখলে আমি আর স্থির থাকতে প্ররিনে। তুমি আর কত দিন নেবে ? আমার যে একা থাকতে আর ভাল লাগছে না তুমি শীঘ্র এস। গত দুদিন ধরে আমাদের প্রাসাদের সামনে সমুদ্রের বালুর ওপর অনেক নূতন মানুষের আনাগোনা লক্ষ্য করছি। তারা আমাদের বাড়ীর দিকে চেয়ে থাকে। প্রথম প্রথম ভাবতাম, তারা বাড়াই দেখে। কিন্তু আজকাল ভাবি, তারা শুধু বাড়ী দেখে না, আরও কিছু দেখবার চেষ্টা করে। কিন্তু আরও কিছু কি, তা আমি জানি না, বুঝতে পারি না। আমার ভয় করে। কেন তারা আমাকে ভয় দেখাবে? এত বড় বাড়ীতে তোমা-ছাড়া হয়ে একা থাকা কি যায় ? তাই ভাবছি, আজ রাত্রে বাবার কাছে গিয়ে থাকব । কবে আসবে তুমি? একটিবার এসে দেখে যাওনা, লক্ষ্মীটি। আবার চলে যাবে। এমন ক’রে এতদিনের জন্য ছাড়াছাড়ি ক’রে কখনও কি রেখেছ আমাকে ? একটি দিনের জন্য এস। আসবে তো ? আর কি লিখব ? তুমি এস। আজ আমার মন বড় খারাপ হয়েছে। শুধু হু-হু করছে।