পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪৭২ মোহন অমনিবাস মোহন মনে মনে আশ্বস্ত হইল। সে সোহাগীর এই কাজকে সমর্থন করিল। ইহাও ভাবিল যে, রায়সাহেব তাহাকেও চিনিতে পারিয়াছিলেন, তবুও জবাব না দিয়া বহাল রাখিয়াছিলেন, সুতরাং এমন পরিস্থিতিতে সোহাগীর অবস্থানের কোন অর্থ থাকে না। মোহন কহিল, “রায়সাহেব কোথায় গেছেন জানো ?” “কি হবে জেনে ? কিন্তু তোমার হ’ল কি বল তো ? একটু বস, আমি একটা মাল নিয়ে আসি। আজ দুশো ফুর্তি করা যাবে।” বলিতে বলিতে রামচরণ প্রায় ছুটিয়া বাহির হইয়া মদ্য কিনিতে গমন করিল। সে একবারও ভাবিল না যে, মাত্র কয়েকদিনের পরিচিত এক অপরিচিত ব্যক্তিকে প্রভুর মুক্ত-কক্ষে রাখিয়া গেল। মোহন চারিদিকে চাহিয়া দেখিতেছিল। মাত্র গত রাত্রে যে স্থানে এক ভয়াবহ নাটকের অভিনয় হইয়া গিয়াছে মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে পুনরায় সেই স্থানে নিঃশঙ্কচিত্তে দাড়াইয়া সে চিন্তা করিতেছে। মোহন চিন্তা করিতে লাগিল, রায়সাহেবের এরূপ ব্যস্ততার সহিত কলিকাতা ত্যাগের হেতুটি কি হইতে পারে? যে-ব্যক্তি একটা শক্তিমান গভর্নমেন্টের মিনিষ্টারকে পর্যন্ত হাতের মুঠোয় চাপিয়া রাখিতে পারে, যে তাহাকেও এমন অবলীলায় প্রতারিত করিতে পারে, সেই ব্যক্তি যে তাহার ভয়ে আত্মহারা হইয়া এইরূপে বাংলা ত্যাগ করিয়া চলিয়া যাইবে, কি করিয়া বিশ্বাস করিতে পারা যায়? “কিন্তু .....” মোহন সবেগে গালিচার উপর পদাঘাত করিয়া কহিল, “কিন্তু যেখানেই থাক শয়তান, আমি সেখান থেকেই তাকে হিড় হিড় করে টেনে আনবো। যে নরপিশাচের ক্রুর প্রতিহিংসায় সরোজের জীবন বিপন্ন হতে চলেছে, তাকে আমি এরূপ ভাবে দূরে থাকতে দেব না, দেব না, দেব না।” একটা মদের বোতল হাতে করিয়া রামচরণ মহা খুশী মনে প্রবেশ করিতেছিল, মোহনের শেষের উক্তি শুনিয়া সহস্যে কহিল, “কি দেবে না হে ? বাজে কথা রেখে দাও, এস এদিকে। খাসা মাল এনেছি।” রামচরণ বোতলটি তুলিয়া মোহনের নাকের নিকটে নাচাইতে লাগিল। মোহন ক্রুদ্ধ ব্যান্ত্রের মত জ্বলন্ত দৃষ্টিতে এক মুহূর্ত চাহিয়া, রামচরণের হাত হইতে মদের বোতলটি কড়িয়া লইয়া সবেগে দূরে নিক্ষেপ করিয়া কহিল, “চুপ কর পাজী, ছুঁচো, রাস্কেল। দূর হী, আমার সামনে থেকে।” ఫ్రో রামচরণ মোহনের ভয়াবহ মূর্তি দেখিয়া ভড়কাইয়া গেল। সে বিচলিত দৃষ্টিতে চাহিয়া থাকিয়া প্রাণপণে সাহস সঞ্চয় করিয়া কহিল, “এ-কি কি ক-ক, করলে তু—তুমি? অমন খা-খা-খাশা দা-দামী মাল....” মোহন পকেট হইতে কয়েকখানা নোট রামচরণের দিকে অবজ্ঞা ভরে ছুড়িয়া দিয়া ড্রইং-রুম হইতে বাহির হইয়া পড়িল। রামচরণ সভয়-দৃষ্টিতে হতবুদ্ধি হইয়া তাহার পরম বন্ধুর দিকে চাহিয়া রহিল। তাহার মাথায় কিছুতেই প্রবেশ করিতেছিল না যে, কেমন করিয়া কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এক দশ টাকার নোট, অমন তুচ্ছভাবে দিয়া যাইতে পারে ? সবার উপর তাহার বন্ধু এমন কি প্রয়োজনে ওরূপ ভয়াবহ ক্রুদ্ধ মূর্তি ধারণ করিতে পারে, তাহাও এক বিস্ময়ের বিষয়।