পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 B মোহন অমনিবাস বা ব্যবহার তাহার কর্মজীবনে খুব কমই দেখিয়াছে। নির্ভীক, দুঃসাহসী, সদা-প্রফুল্ল প্রভুর জীবনে কত নিদারুণ বিপদের মেঘ উদয় হইয়াছে, কত ভীষণ ঝড়-ঝঞ্জা, বজ্রপাত ঘটিয়াছে, శాతాళా శాశి శాశి శాణా “কর্তা!’ মোহনের কর্ণে বিলাসের আহ্বান প্রবেশ করিল না। মোহন বজ্রাহতের মত চাহিয়াছিল, চাহিয়া রহিল। বিলাস অপেক্ষাকৃত নিকটে উপস্থিত হইয়া পুনরায় আহ্বান করিল, “কর্ত!” মোহন মুখ তুলিয়া বিলাসের দিকে চাহিল ; তাহার পর হাতের তারখানির দিকে চাহিল, সঙ্গে সঙ্গে তারের কাগজখানি খসিয়া মেঝের উপর পড়িয়া গেল। মোহন একটা অস্ফুট গর্জন করিয়া সম্মুখের টেবিলের উপর একটি প্রকাণ্ড মুষ্ট্যাঘাত কসাইয়া দিয়া কহিল, “শয়তান! তোর রক্ত যদি না দেখি, তবে মোহন নই, মোহন নই, মোহন নই।” , বিলাস প্রভুর এইরূপ অপ্রত্যাশিত বিস্ফোরণে ভীত ও সন্ত্রস্থ হইয়া দুই পা পিছাইয়া গিয়াছিল, সে মৌন-বিস্ময়ে প্রভুর দিকে চাহিয়া রহিল। মোহন অস্থির-চরণে কক্ষময় দ্রুতপদে পদচারণা করিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। তাহার চক্ষু রক্তবর্ণ ও হস্ত ক্ষণে ক্ষণে মুষ্টিবদ্ধ হইতে লাগিল। মোহন যেন উন্মাদ হইয়া গেল। সে বিড়বিড় করিয়া কি বলিতে লাগিল, তাহা বিলাস একবর্ণও বুঝিতে না পারিয়া বিহুল দৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল। কিন্তু এইটুকু বুঝিতে সে বেগ পাইল না যে, ঘুমন্ত সিংহকে কেহ জাগরিত করিয়াছে! প্ৰভু তাহার আবার পূর্বের প্রভুতে ফিরিয়া আসিয়াছে। ভীত ও বিহুল বিলাসের মন ত্রাসের ভিতরেও আশার আলোক দেখিতে পাইয়া খুশী মনে অপেক্ষা করিতে লাগিল। সহসা মোহনের পদচারণা বন্ধ হইল। সে বিলাসের দিকে চাহিয়া কহিল, “মোটর।” বিলাস কহিল, “কর্তা।” পরমুহুর্তে বিলাস ছুটিয়া কক্ষ হইতে বাহির হইয়া গেল। মোহন পুনরায় তারের কাগজখানি হাতে তুলিয়া লইয়া, লেখা সংবাদটি পাঠ করিতে লাগিল। মাত্র দুই ছত্র সংবাদ, “গত রাত্রি হইতে রানীমাকে পাওয়া যাইতেছে না। সকল অনুসন্ধান ব্যর্থ হইয়াছে। কোন শত্রুর কাজ বলিয়া সন্দেহ হয়। শীঘ্র এস। তোমার পিতা।” সহসা মোহনের দুই চক্ষু উথলিয়া অশ্রু-ধারা নামিয়া আসিল। যে-চক্ষুতেকেহ কখনও অশ্রুচিহ্ন দেখে নাই, যে চক্ষু ভয়াবহ বিপদের মুখে দাঁড়াইয়া শুষ্ক ও উজ্জ্বল থাকিয়ছে, আজ একটি সামান্য নারীর শোকে সেই চক্ষু সকল মর্যাদা জলে ভাসাইয়া দিল। মোহন অস্ফুট কষ্ঠে বলিতে লাগিল, “রানী, রানী ! আমার রানী! হতভাগার মরু-হৃদয়ে সুশীতল ঝরণা-ধারা ! ও হো হো!” মোহন চাপা আর্তনাদ করিয়া দুই হাতে মুখ চাপিয়া বিছানার উপর বসিয়া রহিল। বিলাস যখন পুনরায় কক্ষে প্রবেশ করিল, তখন মোহন অপেক্ষাকৃত শান্ত হইয়াছে। তাহার মুখ অশ্রু-চিহ্ন-মুক্ত হইয়াছে। মোহন নিজ কৰ্মপন্থা ভাবিয়া লইয়াছে। বিলাস “বাসা ভাঙ্গ, বিলাস। তো’র নতুন মা’কে পাওয়া যাচ্ছে না, এখনি পুরী যেতে হবে। নে, তৈরী হয়ে নে।” মোহন খাট হইতে নামিয়া বেশ পরিবর্তনের জন্য পাশ্ব কক্ষে প্রবেশ করিল।