পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8ማ\¢ বিলাস অর্থহীন দৃষ্টিতে চাহিয়া দাড়াইয়া রহিল। সহসা বিলাস হিংস্র জন্তুর মত একটা ঘোৎ’ শব্দ করিয়া দ্রুতপদে পাশের ঘরে মোহনের নিকট উপস্থিত হইয়া কহিল, “তুমি বলছ, আমার নতুন মা’কে পাওয়া যাচ্ছে না, কর্তা ?” মোহন বিলাসের কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিকতায় মুহুর্তের জন্য মুখ তুলিয়া চাহিল; পরে কোটের বোতাম আঁটিতে আঁটিতে কহিল, “হা, যা তুই, তৈরী হয়ে আয়।” “যাচ্ছি কর্তা। কিন্তু আমাকে আপনি বল, এ কাজ কা’র ?” মোহন অস্থির হইয়া কহিল, “মিথ্যে দেরি করছিস, বিলাস। যা শোন আগে।” বিলাস আগ্রহ অতৃপ্ত রাখিয়াই দ্রুতপদে বাহির হইয়া গেল। মোহন নির্বিকার, নিষ্কম্প, নীরব। তাহার মনের পারাবারে তখন যে তুমুল আলোড়ন চলিতেছিল, বুঝিবা পুরাণে কথিত দেব ও দানব শক্তি সম্মিলনে সমুদ্রে যে প্রবল আলোড়ন তুলিয়াছিল, একমাত্র তাহার সহিত মোহনের বর্তমান মানসিক অবস্থার তুলনা করা চলে। সুধা উঠিবে কি বিষ উঠিবে ! সুধা-আস্বাদনে অমর হইবে, না নীলকণ্ঠ হইয়া সারা জীবন বিষের জ্বালায় জুলিয়া মরিতে হইবে? সে ভাবনার স্থান আজ মোহনের মনে ছিল না। ডাকিতেছিল, “রমা, রমা আমার! রানী, রানী আমার।” প্রভু-ভক্ত বিলাসের হাতে মোটরটি অস্ফুট গর্জনে যেন এই কথা ধবনিত হইতেছিল, “যদি মরিতে হয়, মরিব পরে, কিন্তু প্রভুর ইচ্ছা পূর্ণ হইবার পূর্বে কিছুতেই নহে।” (SS) ভোর সাতটার সময় মোহন পুরীর শহরে প্রবেশ করিল। বিলাস সোফারের পাশ্ববর্তী আসন হইতে মুখ ঈষৎ ফিরাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “বাড়ী, না মা’র বাপের বাড়ী, কর্তা ?” মোহন চমকিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি চাস ?” বিলাস তাহার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করিল। মোহন অল্প সময় চিন্তা করিয়া কহিল, “মিঃ অল্প সময় পরে সদূর পথ অতিক্রম করিয়া মোটরখানি যখন পুরীর সমুদ্রের ধারে রাস্তার উপর উপস্থিত হইল, তখন প্রত্যুষের সমুদ্রের শীতল বাতাস ও উদাত্ত গভীর রব দৃষ্টিতে অসীম সমুদ্রের অসীম রূপের দিকে চাহিয়া ক্ষণিকের জন্যও তাহার মনের জ্বালা ভুলিয়া গেল। ধীর গতিতে মোটরখানি মিঃ সোমের প্রাসাদে প্রবেশ করিল। গেটের দারোয়ান মোটরের শব্দে ও বিলাসের আহ্বানে ফটক মুক্ত করিয়া দিলে, মোটর ভিতরে প্রবেশ করাইয়া বিলাস “কর্তা, আমরা এসেছি।” মোহন নির্বিকার স্বরে কহিল, “হা,” কিন্তু একই ভাবে সে বসিয়া রহিল। দারোয়ান এই ধনবান অতিথিটিকে চিনিতে না পারিয়া কহিল, “বড়া সাবকা তবিয়ৎ বিলকুল আচ্ছা নেহি, হুজের।”