পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Գ Ե- মোহন অমনিবাস কবিতা কহিল, “না। একজন পরিচারিকা সঙ্গে এসে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু যাবার লোক রয়েছে, আমি একাই যেতে পারব। কিন্তু যদি তাঁর কথা না শুনতাম, তা হলে এমন বিপদ হয়তো ঘটত না।” কবিতা আপনাকে অপরাধিনী বলিয়া অভিযোগ জানাইল। মোহন চিন্তিত মুখে কহিল, “তাতেও কিছু সুবিধা হত না, বৌঠান! অপরাধী আমি। আমি নিজের শক্তি অপরাজেয় ভাবতাম বলেই এই শাস্তি আমি পেলাম। কিন্তু আমি এই আঘাত সহ্য করব কি করে বলতে পারেন? আমাকে একেবারে অকৰ্মণ্য করে দিয়েছে।” মোহনের কষ্ঠে দারুণ হতাশার সুর ধ্বনিত হইল। দুর্ভাগিনী নারী আর কেউ নেই, ঠাকুরজামাই। নইলে যখন আপনি দুঃখিনীর বিপদে বুক দিয়ে এসে দাঁড়ালেন, তখন অন্তযামী ভগবানই জানেন, আমি কতখানি নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম, সহ্য হ’ল না ভগবানের। তিনি হাসলেন, আমার শাস্তি, আমার আশা নিঃশেষে লয় ক’রে দিতে এই সর্বনাশ ঘটতে দিলেন তিনি। এখন আমার চোখের সামনে অনন্ত অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই রইল না। তরুণী বধু কান্নার ভারে ভাঙ্গিয়া পড়িল। মোহন ক্ষণকাল একদৃষ্টে অশ্রু-মুখী তরুণীর দিকে চাহিয়া থাকিয়া সহসা মুখ তুলিয়া দৃষ্টি-রুদ্ধকর অশ্রু অঞ্চল-প্রান্তে মুছিয়া বধূ কবিতা মোহনের মুখের পানে চাহিল। মাহন স্নিগ্ধ-সম্মিত মুখে কহিল, “এখানে কোন শোকের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন বৌঠান ?” কবিতা নীরবে চাহিয়া রহিল। মোহন বলিতে লাগিল, “আমাকে শিশুর মত কোমল করেছিল, আমার চির-শুষ্ক চক্ষুতে অশ্রু-সুধা সঞ্চার করেছিল, আমাকে কাদতে শিখিয়ে এক অনাস্বাদিত সুখে আচ্ছন্ন রেখেছিল, যে রেখেছিল, আজ সে.........” মোহনের স্বর ঈষৎ কম্পিত হইয়া উঠিল। এক করেছে । আজ আমি আবার পাষাণে পরিণত হয়েছি, আজ আমি আবার দসু মোহন। দসু মোহন একদিন যার নাম দুরাচার ধনীর দুঃস্বপ্নের বিষয় হয়েছিল, যার নাম প্রবল শক্তিমান পুলিশের দুর্ভাবনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আজ সেই দৃস্ট্র মোহন আবার আপনাকে ফিরে পেয়েছে। আজ সে নির্মম, নিষ্ঠুর, নির্দয়, হৃদয়হীন! যে তা’র বুকখানাকেএমন ভাবে চূর্ণ করেছে, সেই শয়তানের রক্ত যতদিন না দেখছি, ততদিন আমার শাস্তি নেই, আমার অন্য চিন্তা নেই, অন্য কামনা নেই, আমি রানীকে উদ্ধার করব, পাপীকে এমন শাস্তি দেব যা দেখে অন্যে শিউরে উঠবে। আমি আবার মানব-ত্রাস দসু্যমোহন।” বধূ কবিতা ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া সকল ভুলিয়া মোহনের একখানি হাত আপন দুই হাতের মধ্যে চাপিয়া ধরিয়া আবেগ-ব্যাকুল স্বরে কহিল, “শাস্ত হোন, আপনি শান্ত হোন। আমার মুখের দিকে চেয়ে, হতভাগিনীর আর কেউ নেই ভেবে আপনি শাস্ত হোন।” মোহন কবিতার হাতটি ধরিয়া কহিল, “দেবী, আপনি একটা হীন দস্যকে স্পর্শ করতেও ঘৃণা করেন না ! আপনি আমার মায়ের মতই স্নেহময়ী।” মোহনের চক্ষু অশ্রু-সজল হইয়া