পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন 8 করাইয়া পুনরায় কহিল, “আমি আপনাকে স্পর্শ করে শপথ করছি, আপনার স্বামী আমার প্রিয়তম বন্ধু সরোজকে সর্ব সন্মানের সঙ্গে আপনাকে ফিরিয়ে এনে দেব। আরও শপথ করছি, যে-শয়তান আমার রানীর অঙ্গে হাত দিয়েছে, তার রক্ত দর্শন করব। আমার রানীকে যে অপমানিত করবার স্পর্ধা দেখিয়েছে, তাকে—তাকে—ও ভগবান। তুমি নেই—নেই–তুমি নেই!” মোহন দুই হাতে মুখ চাপিয়া বসিল। কবিতা কহিল, “আপনি জানেন কে দিদিকে চুরি করেছে ??? মোহন হতাশ স্বরে কহিল, “জানি।” কবিতা বিস্ময়ে হতবাক হইয়া গেল; সে পুনরায় কহিল, “জানেন আপনি?” “হাঁ জানি। যে নর-পিশাচ সরোজকে এক মিথ্যা অপরাধে গ্রেপ্তার করিয়েছে, সেই পিশাচই রানীকে আমার অবর্তমানের সুযোগে নিয়ে যেতে সাহসী হয়েছে।” বলিয়া মোহন সহসা উঠিয়া দাঁড়াইল। . কবিতা শশব্যস্তে কহিল, “একি, উঠলেন যে? বাবার সঙ্গে একবার দেখা করবেন না ?” “না, বৌঠান। এখনও আমি রানীর ইচ্ছা পূর্ণ করতে পারি নি—এখনও সরোজ হাজতে। রানী নিরুদ্দেশ, আমি কোন মুখে তার সঙ্গে দেখা করব? কি আশার বাণী তাঁকে শোনাব? তা ছাড়া রানী-হারা একটা দসু্যর এমন কোন বলই নেই বৌঠান, যা নিয়ে তার মত ব্যক্তির সম্মুখে দাড়াতে পারি।” মোহন ঘরময় পায়চারি করিতে লাগিল। পরে মোহন পুনরায় কহিল, “আমি এসেছিলাম স্বচক্ষে দেখতে, স্ব-কর্ণে সব শুনতে। আমার শোনা শেষ হয়েছে। এখন রানীর কক্ষে গিয়ে যা দেখবার, তা দেখব আমি! তারপর ঝি-চাকরদের বিদায় ক’রে দিয়ে, প্রাসাদে চাবি-বন্ধ করে শক্রর ওপর ঝাপিয়ে পড়ব।” মোহন এক মুহুর্তে নীরব থাকিয়া কহিল, “পুলিসে কোন সংবাদ দেওয়া হয় নি, না ?” & কবিতা নত মুখে কহিল, “না। আমি নিষেধ করেছি।” ao সব জানে ?” ు* “প্রথমে তারা জেনেছিল, যে দিদিকে পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার কাছ থেকে তার পেয়ে হঠাৎ কলকাতা চলে গেছেন।” কবিতা নত স্বরে কহিল। মোহন নত দৃষ্টিতে বধূ কবিতার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “আপনাকে কি ব’লে ধন্যবাদ দেব জানিনে, বৌঠান। আপনি আমার দিক থেকে বিবেচনা করে, প্রবল বাধার মুখ অবরুদ্ধ ক’রে রেখেছেন। নইলে আমার এই সাক্ষাৎ একান্ত অসম্ভব হয়ে পড়ত।” কবিতা ধীর স্বরে কহিল, “আবার কবে দেখা পাব?” “কবে তা জানিনা, বৌঠান। তবে আমার দেখা পাবেন। এবার যখন আসব এখানে, তখন যেন আপনাকে সুখী ও শাস্ত দেখতে পাই।” সহসা মোহন বারান্দায় বাহির হইয়া অনুচ্চস্বরে ডাকিল, “বিলাস।”