পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৪৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন - ઇન્જ যে-মোটরখানা গিয়েছিল, তা বোধ হয় আপনি দেখেন নি ?” যুবক ভূ-কুঞ্চিত করিয়া কহিল, “রাত্রি সাড়ে এগারোটার সময় তো?” মোহন সোৎসাহে মাথা নাড়িয়া কহিল, “হা। নীল রঙের বডি, উলস্থলী কার।” যুবক সম্মিত মুখে কহিল, “আজ্ঞে হা, দেখেছি। শুধু চোখের দেখা নয়, তাদের পেট্রল ফুরিয়ে গিয়েছিল, তা’ অবধি যোগাড় ক’রে দিতে হয়েছে। অত্যন্ত ভদ্রলোক তিনি।” যুবকের স্বরে সশ্রদ্ধ ভাব ফুটিয়া উঠিল। মোহন কহিল, “মহিলাটি বোধ হয় খুব পীড়িত ছিলেন ?” যুবক সহানুভূতিসূচক স্বরে কহিল, “আজ্ঞে হা। তিনি এমন দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন যে, সর্বদা শুয়েই ছিলেন। ভদ্রলোক বললেন, তিনি কলকাতায় চিকিৎসা করবার জন্য নিয়ে যাচ্ছেন।” মোহন আগ্রহ দমন করিয়া কহিল, “ভদ্রলোক তার নাম বলেছিলেন ?” “হা, স্যার। দাঁড়ান মনে ক’রে বলছি।” বলিয়া যুবক চিন্তামগ্ন হইল। মোহন কহিল, “রায়সাহেব কিছু তো ?” যুবক ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “আজ্ঞে না, তিনি মিত্র, কি মিত্ৰ মনে পড়ছে না। তবে মোহনের উদ্দেশ্য সফল হইল। সে যুবকের হাতে দুইখানি দশ টাকার নোট দিয়া কহিল, “আপনি যে সংবাদ আমাকে দিলেন, তার মূল্য অর্থ দ্বারা নিরূপণ হয় না। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।” সংযত স্বরে কহিল, “না স্যার, এ কিছুতেই হবে না। আমি গরীব সত্য, কিন্তু ভিক্ষুক নই। আপনি চায়ের ন্যায্য দুটি পয়সা দিন, টাকা ফেরত নিন।” মোহন মুগ্ধ বিস্ময়ে ক্ষণকাল যুবকের মুখের দিকে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “আমি বলেছি না যে, আপনি যে সংবাদ আমাকে অকপটে জানিয়েছেন তার মূল্য নেই। তাছাড়া আমি যা যৎসামান্য আপনার হাতে দিয়েছি তা যদি অস্বীকার করেন, তবে প্রথম মুখেই আমি যে নিদারুণ আঘাত পাব, সে ধারণ আপনার কিছুতেই হবে না। আচ্ছা,আসি ভাই আমি।” (* মোহনের কণ্ঠস্বরে যে আন্তরিকতার সুর ফুটিয়া উঠিল, তাহী শুনিয়া যুবক হতবাক হইয়া গেল। এমন এক ঐশ্বর্যশালী ধনী যুবকরে পক্ষে তাহার মত দরিদ্রের সহিত এমন দরদভরা কথা বলিতে সে ইতিপূর্বে আর কখনও শুনে নাই বা দেখে নাই। যুবক বিগলিত চিত্তে দুই হাত কপালে ঠেকাইয়া নমস্কার করিয়া কহিল, “আপনি কে স্যার?” মোহন মোটরে আরোহণ করিয়া কহিল, “আমার নাম?” সোফারের দিকে চাহিয়া কহিল, “চল বিলাস।” যুবকের দিকে চাহিয়া স্নিগ্ধ মুখে পুনরায় কহিল, “আমার নাম, মোহন, দসু মোহন।” মোটর মৃদু শব্দে গর্জন করিয়া উঠিল এবং যুবক দ্বিতীয় কথা বলিবার পূর্বেই অতর্কিতে গাড়ী ছুটিয়া গেল। যুবক বিহুল দৃষ্টিতে গাড়ীটির অপসৃয়মান কলেবরের দিকে চাহিয়া রহিল।