পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qのこ মোহন অমনিবাস মোহন একতাড়া নোট বিলাসের হাতে দিল। বিলাস নতনেত্রে চাহিয়া থাকিয়া কহিল, “নতুন-মাকে আমি দেখব না?” মোহনের মুখে ক্ষীণ-হাস্য-রেখা ফুটিয়া উঠিল। সে কহিল, “আচ্ছা, আচ্ছা, তা হবে? খন।” বিলাস প্রভুর এই উক্তিটির অর্থ বিশেষ ভাবেই বুঝিত। প্ৰভু যখন কোন বিষয় এড়াইয়া যাইতে চাহেন, তখন তিনি এইরূপ উত্তর দিয়াই তাহার মুখ যে বন্ধ করিতেন, তাহা বিলাসের অজ্ঞাত ছিল না। সে ক্ষুণ্ণ মনে ধীরে ধীরে মোহনকে প্রণাম করিয়া চলিয়া গেল। মোহন তাহার মাঝারি সুটকেশটি হাতে লইয়া ওয়েটিং রুমে গিয়া বসিল। তখনও প্লেন আসিতে অর্ধ ঘন্টা বিলম্ব ছিল। মোহন নীরবে বসিয়া যখন তাহার পরবর্তী কর্মপন্থা চিন্তা করিতেছিল, তখন একজন উচ্চপদস্থ পুলিস-অফিসার ওয়েটিং রুমে প্রবেশ করিলেন। মোহন চকিতের জন্য অফিসারের মুখের দিকে চাহিয়া দৃষ্টি ফিরাইয়া লইয়া বসিল। পুলিস-অফিসার একদৃষ্টে মোহনের দিকে চাহিয়া কহিলেন, “মার্জনা করবেন। গুড় আফটারনুন কোথায় আপনাকে দেখেছি বলুন তো?” . মোহন সম্মিত মুখে প্রত্যাভিবাদন করিয়া কহিল, “ঠিক স্মরণ করতে পারছিনা। কিন্তু কে আপনি ?” ভদ্রলোক কহিলেন, “আমি এলাহাবাদের পুলিস-সুপার। আপনি?” একটি অতি ক্ষীণ ক্ষণের জন্য মোহনের সারা দেহে তড়িৎ প্রবাহ বহিয়া গেল। সেই সময়টুকুর ভিতর—তাহার সহিত এই ইংরাজ-সুপারের যে অবস্থা-বিপর্যয়ে কয়েক মাস পূর্বে সাক্ষাৎ হইয়াছিল এবং মুক্তি মিলিয়াছিল—তাহা মনে উদয় হইয়াই অন্তহিত হইয়া গেল। এইটুকু সময়ের মধ্যে মোহনের মনের ভিতরে যে আলোড়ন উঠিতেছিল, যদিও তাহা বাহিরে প্রকাশ পাইল না, তাহা হইলেও এই সাময়িক দ্বিধার সুযোগ লইয়া সুপার সুপার লু কুঞ্চিত মুখে চাহিয়া রহিলেন। এই সব সঙ্কটজনক মুহুর্তগুলিতে মোহনের মত নির্বিকার, অটল এবং স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিল না। সে হাসিতে হাসিতে কহিল, “আপনারা কর্মজীবনের কত বিভিন্ন ব্যক্তির সংস্রবে আসেন, তার ইয়ত্তা নেই। হয়তো আমারই মত কোন লোকের সংস্রবে এসে থাকবেন। কিন্তু আমি বলতে পারি, আমার বর্তমান জীবনে আপনার সঙ্গে কখনও দেখা হয় নি।” পুলিস-সুপার চিন্তিত হইয়াও হাসিয়া ফেলিলেন; কহিলেন, “আপনার বর্তমান জীবনে? আপনি কি বুঝাতে চাইছেন, স্যার?” এমন সময়ে ডাকবাহী এরোপ্লেনের গুরু গর্জন মাথার উপর ভাঙ্গিয়া পড়িল। মোহনও অট্টহাস্যে ভাঙ্গিয়া পড়িয়া কহিল, “আমি অটুট নিশ্চয়তা অর্থে ও-কথা ব্যবহার করেছি, স্যার। সে যাই হোক, এখন আমি বিদায় নিতে বাধ্য হচ্ছি। আপনিও কি এই প্লেনের আরোহী ?” পুলিস-সুপার কহিলেন, “হা, আমি দিল্লী চলেছি। আপনি?”