পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন ® ÖÖ সহসা মোহন পুলিস-সুপারের দক্ষিণ হস্ত ধরিয়া সজোরে নাড়িতে নাড়িতে কহিল, “আমার মত সৌভাগ্যবান আর দ্বিতীয় নেই। উড়ো জাহাজে এই প্রথম উঠছি। ভয়ের আর অন্ত ছিল না। এখন আপনাকে সঙ্গী পেয়ে নির্ভয় হলাম। আসুন।” পুলিস-সুপার দ্বিতীয় প্রশ্ন করিবার পূর্বেই মোহন এক হাতে তাহার সুটকেশ ও অন্য হাতে সুপারের একখানি হাত ধরিয়া তাহাকে একরূপ টানিয়া লইয়া চলিল। . পুলিস-সুপারের সহিত বৃহৎ ডাকবাহী-জাহাজে আরোহণ করিয়া পরে মোহন র্তাহার পাশ্ববর্তী আসনে সানন্দ হাসি মুখে বসিয়া পড়িল। মেল-প্লেন এখানে মাত্র দশ মিনিট অপেক্ষা করিয়া পেট্রল লইবে সুতরাং এই সময়টুকু সুপারকে অন্যমনস্ক রাখিবার জন্য মোহন প্রশ্ন করিল, “আপনি কি দিল্লীতে বদলী হয়ে যাচ্ছেন ?” পুলিস-সুপার কহিলেন, “আপনার পরিচয় এখনও পাই নি, জেন্টেলম্যান!” মোহন হাসিতে হাসিতে কহিল, “আমার পরিচয় বিশেষ কিছু নেই। আমার নাম মিঃ ব্যানাজী। বাঙলাতে কিছু জমি আছে, সু-লোকে বলে জমিদার, কু-লোকে বলে দসু্য; প্রজার রক্তে নিজের উদর পূর্তি করে, দেশ-ভ্রমণে বার হয়েছি। যাচ্ছিলাম এলাহাবাদে, শুনলাম যে সেখানে মহামারীর ভয় দেখা দিয়েছে। তাই মত পরিবর্তন করে চলেছি দিল্লী। এইবার বলুন, আপনি বদলী হয়ে যাচ্ছেন না, ছুটি উপভোগ করতে চলেছেন?” কথা শেষ হইবার পূর্বে মোহন তাহার স্বর্ণ-নির্মিত সিগার কেস বাহির করিয়া একটি দামী সিগার সুপারের হাতে দিয়া অপর একটি নিজের ঠোটের মধ্যে ধরিল ও দেশলাই জুলিয়া প্রথমে সুপারের সিগার ধরাইয়া পরে আপনার ধরাইল। সুগন্ধে স্থানটি পূর্ণ হইয়া উঠিল। - - পুলিস-সুপার মোহনের ব্যবহারে প্রীত হইয়া কহিলেন, “না মিঃ ব্যানাজী, আমি বদলীও হচ্ছি না বা বেড়াতেও যাচ্ছি না। চলেছি এক ভীষণ কর্তব্যের খাতিরে। সফল হব সে আশা করি না, তবে চেষ্টা করতে বাধা নেই ভেবেই গভর্নমেন্টের প্রস্তাব মেনে নিয়ে আলেয়ার পিছনে ছুটে চলেছি।” মোহন মৃদু হাসিয়া কহিল, “কিছু বুঝলাম না। তা ছাড়া পুলিস বিভাগের কাজ পুলিস-সুপার গর্বিত মুখে কহিলেন, “ভগবানের কাছে প্রার্থনা করুন, এমন দুর্ভোগ যেন কখনও না পোহান। আচ্ছ ভালকথা, আপনি তো বাঙালী,আপনার মোহন দস্টার সম্বন্ধে কিরূপ ধারণা বলুন তো? আমাদের তো মহাপুরুষ নাজেহাল করে ছাড়ছে ?” মোহন মৃদু হাসিয়া কহিল, “আমাকে মার্জনা করবেন। লোকটার সম্বন্ধে আমার বিশেষ কিছু ধারণা নেই। তা’ ছাড়া, তা’র সম্বন্ধে এত আজগুবি, সত্য-মিথ্যা মেশান গল্প প্রচারিত হয়েছে যে, তাদের অতিক্রম ক’রে নতুন কিছু ধারণা করাও শক্ত।” প্লেন গজিয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে পৃথিবী ছাড়াইয়া বৃহৎ উড়োজাহাজটি আকাশের বুক চিরিয়া উদ্দাম বেগে বিপুল বেগের সহিত ছুটিতে লাগিল; ক্ষণকাল নীরব থাকিয়া পুলিস-সুপার কহিলেন, “আমি চলেছি সেই দস্যুটার পিছনে, মিঃ ব্যানাজী। একটু আগে কলকাতার পুলিস-কমিশনারের কাছ থেকে টেলিফোনে অনুরোধ পেলুম যে, যখন আমি একবার দসু মোহনের সঙ্গে মুখোমুখি পরিচিত হ’বার সৌভাগ্যই বলুন, আর দুর্ভাগ্যই