পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন (t O :, মোহন অস্ফুট কষ্ঠে বলিতে লাগিল, সরোজ, বন্ধু সরোজ ! আমি একেবারে তোমার কথা ভুলে গিয়েছিলুম। আমি যে এতদূর অক্ষম, এতখানি অকৰ্মণ্য এর আগে আমি তা’ জানতাম না, বন্ধু। রানীকে হারিয়ে আমি শক্তিহীন হয়ে পড়েছি। আমি এখন কি করি? কি করি। মাত্র মধ্যে একটা দিন, তারপর শেষ হয়ে যাবে! উঃ!’ মোহন উন্মাদের মত হইয়া পড়িল। তাহার চিন্তা-শক্তি লোপ পাইল, সে দুই হাতে মাথা চাপিয়া বসিয়া পড়িল। দুঃখে, ক্ষোভে ব্যর্থতায় তাহার দুই চক্ষু হইতে অশ্রু ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। কোন দিকে কোন কিনারা দেখিতে না পাইয়া মোহন গাড়ীর মধ্যে বসিয়া শিশুর মত অশ্রু বিসর্জন করিতে লাগিল। ফিটন হোটেলে উপস্থিত হইলে মোহন গাড়ী হইতে কোন প্রকারে অবতরণ করিয়া, পকেটে হাত ভরিয়া দিল ও হাতে যাহা উঠিল, তাহা না দেখিয়া বিস্মিত কোচম্যানের হাতে তুলিয়া দিয়া টলিতে টলিতে হোটেলে প্রবেশ করিল। ' হোটেলের খানসামা মোহনের কক্ষে গিয়া তাহার হাতে একখানি টেলিগ্রাম দিয়া কহিল, “আপনার টেলি হুজুর।” মোহনের নিজীব ও বিহুল ভাব নিমেষে অন্তহিত হইয়া গেল। সে ভূ-কুঞ্চিত করিয়া কহিল, “আমার টেলি?” খানসামা কক্ষ হইতে বাহির হইয়া গিয়াছিল, সুতরাং উত্তর দিবার কেহ ছিল না। মোহন টেলি’র খামটি পাঠ করিয়া দেখিল, তাহার ছদ্মনাম ‘ব্যানাজী” লেখা রহিয়াছে। তাহার মনে পড়িল, প্রভাতে বিলাসকে তার করিয়া তাহার বর্তমান নাম ও ঠিকানা জানাইয়া নূতন সংবাদ চাহিয়াছিল ও রায়সাহেবের উপর লক্ষ্য করিতে বলিয়াছিল। সে কম্পিত হস্তে খামখানি ছিড়িয়া, তারটি বাহির করিল ও পাঠ করিতে করিতে সোফার উপর বসিয়া পড়িল। তাহার মুখ হইতে শুধু বাহির হইল, “শয়তান।” • মোহন দ্বিতীয় বার টেলিটি পাঠ করিল, তাহাতে লেখা ছিল— “বন্ধু ! আলেয়ার পিছনে আর কতদিন ছুটে বেড়াবে ? নিবোধ, এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি এই চিঠিখনি রায়সাহেব ভৃত্যের মারফত আপনার জন্য আমার কাছে পাঠিয়েছেন। 3-বিশ্বস্ত ভৃত্য। মোহনের দুটি ভূ-কুঞ্চিত হইয়া উঠিল, তাহার হস্ত মুষ্টিবদ্ধ হইয়া গেল। সে উধ্বনেত্রে কিছু সময় চাহিয়া রহিল, পরে কক্ষময় পায়চার করিয়া ফিরিতে ফিরিতে অস্ফুটে কষ্ঠে কহিল, “শয়তান। এক-চক্ষু-হীন পিশাচ। দুৰ্বত্ত, ডাকাতের অধম অবিনাশ রায়! তোমাকে আমি এমন শিক্ষা দেব—ঘৃণিত কুকুর, যা তুমি মরণের পরও মনে রাখবে। দলিল— কাচের গোলক, এক চক্ষু-হীন—সরোজ, রমা— উদভ্ৰান্ত স্বরে উচ্চারণ করিতে করিতে সহসা মোহন একটা চেয়ারের পশ্চাভাগ ধরিয়া দাড়াইল এবং অকস্মাৎ চেয়ারখানা তুলিয়া দূরে নিক্ষেপ করিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল, “পেয়েছি, পেয়েছি, আলবাত পেয়েছি। খানসামা, খানসামা।” চেয়ার-পতনের শব্দে ও চীৎকারে হোটের খানসামা, কেরানী ও ম্যানেজার শশব্যস্তে ছুটিয়া আসিল। তাহারা মোহনকে উন্মাদের ন্যায় আনন্দধ্বনি করিয়া দ্রুতবেগে পরিভ্রমণ