পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(t : 8 মোহন অমনিবাস জোর করে তোমাকে বশ করব। আমার ইচ্ছা, আমার ক্ষুধা তৃপ্ত করব।” রমা ধীর অথচ দৃঢ় কষ্ঠে কহিল, “আমার নির্দোষী ভাইকে রক্ষা করতে ভিক্ষা চাইছি, তা যদি আপনার কাছে খুব একটা বড় হয়ে দেখা দেয়, তবে আপনি ভুল করছেন। আপনি জানেন, কত বড় শয়তান আপনি! আপনি জানেন, আমার স্বামীর প্রতিহিংসা কিরূপ বহ্নিজুলার চেয়েও দাহকর, তবু আপনি সাহস করেছেন আমাকে প্রতারিত করতে। কিন্তু এসবের জন্য একদিন যে আপনাকেই জবাবদিহি করতে হবে, তা ভুলতে পারছেন না বলেই আমার ওপর অত্যাচার করতে বিরত আছেন। নইলে ......” বাধা দিয়া রায়সাহেব কহিলেন, “ভুল, ভুল রমা, তোমার ভুল। রায়সাহেব অবিনাশ রায় যে কিরূপ শক্তিমান তুমি জান না বলেই তোমার ভ্রম হয়েছে। ভয় আমি কারুকেই করি না, রমা। আমি তোমাকে ভালবাসি। সত্যি রমা আমি যে কোন শপথ করে বলতে পারি, তোমাকে আমি আমার বুকের রক্ত অপেক্ষা প্রিয় ভাবি। তাই তোমাকে আয়ত্তের মাঝে পেয়েও তোমার এতটুকু অনাদর করতে পারি নি।” রমা কঠিন স্বরে কহিল, “আমি আপনাকে ঘৃণা করি, কায়মনোপ্রাণে ঘৃণা করি। দসু্যু তস্করেরও যে-চরিত্র আছে, আপনার তা নেই। যার জীবিকা পরকে প্রতারণা করা, তার মুখে ওসব কথা যে আদৌ মানায় না, তা কি কেউ আপনাকে বলে দেয় নি ? আশ্চর্য। আমি আপনাকে এখনও অনুরোধ করছি, আমার দাদাকে মুক্তি দিন, আমাকে মুক্তি দিন, আমার বাবাকে মুক্তি দিন। আমি দেখব, আপনার এতটুকুও বিপদ যাতে না হয়। নইলে আমার স্বামীর দৃষ্টি এড়িয়ে বেশী দিন আপনি পালিয়ে বেড়াতে পারবেন না।” রায়সাহেবের মুখে হাসি দেখা দিল। রমার মনে হইল, যেন একটা হিংস্র সর্প বিষদীত বাহির করিয়া দেখাইতেছে। রমা শিহরিয়া উঠিয়া দুই পা পিছাইয়া গেল। রায়সাহেব কহিলেন, “কিন্তু কাল সরোজের বিচার, রমা। কালই রায় দেওয়া হয়ে যাবে। তারপর এক মাসের মধ্যে সে এই দেশ চিরতরে ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। তুমি নিজের সুখের কথাও ভাবছ না, ভাইয়ের জীবনের কথাও ভাবছ না। এতটা স্বার্থপর হলে কেমন ক’রে তুমি?” * இ রমা একটা চেয়ারের পশ্চাদ্ভাগ ধরিয়া দাঁড়াইয়া, তাহার থরথর কম্পিত দেহকে সংযত করিল। সে অতি কষ্টে শক্তি-সংগ্ৰহ করিয়া কহিল, “নির্দোষের কখনও সাজা হয় না। আপনার মত মহাপাপীনা জানতে পারে,তবুভগবান আছেন তিনি আমরদকে রক্ষা করবেন।” XX রায়সাহেব হা হা করিয়া হাসিয়া কহিলেন, “ওটা কি বিলাতে শিক্ষা-প্রাপ্ত-তরুণীর কথা হ’ল, রমা ? পল্লীর একটা অশিক্ষিতা তরুণীর মুখে যা মানায়, তা যে তোমার মুখে মানায় না, সে কথাও কি তোমাকে কেউ বলে দেয় নি ? আচ্ছা, একটা কথার জবাব দাও তুমি। যে দসু্য প্রাণ ভয়ে, পুলিসের ভয়ে, কুকুরের মত দেশ হতে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ায়, দিনের আলো যা’র চোখে পীড়া দেয় বলে রাত্রির অন্ধকারে পথ চলে, দেশের অভিজাত ধনীসম্প্রদায়ের যে নিকৃষ্টতম ঘূণার পাত্র, এমন একটা লোকের জন্য তোমার মত মেয়ের এতখানি ভালবাসা—না, না, ভালবাসাকে কলঙ্কিত করবে না, এতখানি লালসা সম্ভব হ’ল কি ক’রে?”