পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমা-হারা মোহন & S (t রমা বিদ্যুৎ-বর্ষ দৃষ্টিতে একবার রায়সাহেবের দিকে চাহিয়া দৃষ্টি নত করিল। কোন কথা বলিল না। রায়সাহেব বলিতে লাগিলেন, “অন্য ক্ষেত্রে আমি তোমাকে মর্যাদা দেব। যা’ পাবার জন্য প্রত্যেক শিক্ষিত মেয়ে আকুল হয়—আমি তোমাকে প্রচুর অর্থ, অলঙ্কার-সম্পদের অধিকারিণী করব, যা প্রত্যেক তরুণী ভালবাসে, সবার উপর—আমার জগজ্জয়ী প্রাণময় ভালবাসায় তোমাকে ভাসিয়ে দেব। রমা, তোমার সব রূঢ় কথা, সব কু-বচন আমি ভুলে যাচ্ছি। এখনও তুমি বল, তুমি আমার হবে ? বলো রমা, সত্য বলছি, আমি তোমার জন্য উন্মাদ হয়েছি। নইলে দসু মোহনের মুখের গ্রাস চুরি করে, এতখানি বিপদের মুখে বাপিয়ে পড়েও স্থির থাকতে পারতাম না। রমা ?” রমার সারা মুখে ঘূণার সমারোহ ফুটিয়া উঠিল; সে কহিল, “আমি আপনাকে ঘৃণা করি।” “কেন? আমার একটু বয়স হয়েছে বলে? আমি যুবক নই বলে ? কিন্তু আমি বৃদ্ধ নই, আমি অর্থব নই, আমি দরিদ্র নই, আমি এমন কিছুই নই, যা তুমি ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখতে পার। তুমি একটা মিথ্যা সংস্কারের মোহে নিজেকে পীড়ন করছ ছাড়া আর কিছুই নয়। তুমি ভাবছ তুমি বিবাহিতা; সুতরাং ধর্ম, আচরণ তোমার পক্ষে অপরিত্যাজ্য। কিন্তু ভাবছ না কেন, তোমাদের যে বিবাহ হয়েছিল, তা আদেী ধর্মসঙ্গত হয়নি? একটা দসু্যু আত্মগোপন করে, একটা মিথ্যা নামে যে বিবাহের প্রহসন অভিনয় করেছিল, তাকেই তুমি সত্য বলে মেনে নিয়ে এত বড় ভুল করতে পারবে ?” রমা শাস্ত স্বরে কহিল, “তিনি আমার কাছে আত্মগোপন করেন নি।” “ওঃ, তোমার কাছে! কিন্তু মিথ্যা নামে যে মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছিল, তা’র কি কৈফিয়ত তোমার আছে, রমা?” রায়সাহেব হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করিলেন। রমা একই স্বরে কহিল, “র্তার সত্যি নামেই বিবাহের মন্ত্র-পাঠ হয়েছিল। ‘মোহনই র্তার মিথ্যা নাম। আসল নাম যা বিবাহ সেই নামেই হয়েছিল। কিন্তু এ সব নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে আমার রুচি নেই। আপনি যদি নিজের শুভ কামনা করেন, তবে আমার অনুরোধ রক্ষা করবেন। নইলে আমি অনেক ভেবেছি আমার প্রাণ যায় কিংবা যে কোন সর্বনাশ আমার হােক, তবু আপনার ঘূর্ণিত শর্তে আমি সম্মত হব না।” শত সাবধানতা সত্ত্বেও রমার স্বর কঁপিয়া উঠিল। " রায়সাহেবের মুখের হাসি বিলীন হইয়া মুখ সাতিশয় গম্ভীর আকার ধারণ করিল। তিনি কিছুক্ষণ একদৃষ্টে রমার দিকে চাহিয়া থাকিয়া কহিলেন, “উত্তম, তাই হোক! বুঝেছি, তুমি ভেবেছ, ইংরাজের আদালতে কখনও অবিচার হতে পারে না, সুতরাং তোমার ভাই মুক্তি পাবে। উত্তম ! তাই হোক। তারপর তোমার এই দম্ভ কতক্ষণ বজায় থাকে, তোমার এই কাঠিন্য কতক্ষণ বিরাজ করে, আমি দেখে নেব। আমি জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, রমা! তোমার মত মেয়ের সঙ্গে এইভাবে আমার এই প্রথম পরিচয় নয়। ইতিপূর্বে তোমার মত অনেক দপী-মেয়েকে আমি দেখেছি, চিনেছি, কিন্তু শেষে হা-হা, হায়, সবাই সেধে-যেচে প্রণয় নিবেদন করতে পথ পায়নি। তখন কি হয়েছে জান ?”