পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন & a এসেছেন আপনি?” “আপনি আমার ছবি ভালবাসেন, সত্যি ?” মোহন জিজ্ঞাসা করিল। মেমসাহেব এক পা অগ্রসর হইয়া কহিলেন, “সত্যি। কিন্তু এখন আমি আপনাকে ঘৃণা করি।” * মোহন মৃদু হাসিয়া কহিল, “আমাকে ঘৃণা করুণ আপত্তি নেই। আমার ছবি ভালবাসেন এ আমার পরম সৌভাগ্যের বিষয়। একমাত্র এই কারণেই বিপদ আছে জেনেও আপনাকে তা উপহার দেবার জন্য আসতে পেরেছি। শিল্পী ও সাহিত্যিক সৃষ্টি করে—আনন্দোপলব্ধির জন্য। অন্যে তাদের সৃষ্টিকে প্রশংসা করবেন, অনুভব কোরে আনন্দ পাবেন, এই চিন্তা শিল্পী ও সাহিত্যিকের মনে আনন্দ-রস পরিবেশন করে। আর এই আনন্দের নেশায় পাগল হয়ে বাঘের গহ্বরে প্রবেশ করতেও আমি প্ররোচিত হয়েছি। মেমসাহেব সবিস্ময়ে মোহনের কথা শুনিতেছিলেন; কহিলেন, “কই দেখি, কি ছবি এনেছেন?” মোহন সুবৃহৎ ছবিখানি মেমসাহেবের দিকে ফিরাইয়া একটি ছোট টেবিলের উপর রাখিল । মেমসাহেব এতক্ষণ মোহনের নিকট হইতে এরূপ দূরে ছিলেন যে, মুহুর্তের প্রেরণায় পড়িতেই তাহার শিল্পী-মন সব কিছু অস্তিত্ব ভুলিয়া গেল। তিনি বিস্মৃত হইলেন, তাহার সম্মুখে দসু মোহন রহিয়াছে; তিনি ভুলিয়া গেলেন যে, দসু্য র্তাহার দোর্দণ্ড-প্রতাপ স্বামীকে পর্যন্ত প্রতারিত করিয়া তাহাকে অশেষ চিন্তা-ভারে জর্জরিত করিতেছে;ভুলিয়া গেলেন যে, দসু্য অসংখ্য ধন-সম্পদ লুণ্ঠন করিয়া আজ পর্যন্ত পুলিস ও গভর্নমেন্টের সমস্ত শক্তি তুচ্ছ করিয়া দূরে থাকিতে সক্ষম হইয়াছে;ভুলিয়া গেলেন যে, দসু্যু-মোহনবিভীষিকায় অতি বড় শক্তিমান পুলিসও কম্পিত হয়। তিনি এক-পা এক-পা করিয়া মোহনের সম্মুখে ছবির নিকট আসিয়া দাড়াইলেন এবং সবিস্ময়-মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছবির দিকে চাহিয়া রহিলেন। তাহার মুখে সশ্রদ্ধ ভাবটি ফুটিয়া উঠিল। বহুক্ষণ অতিরহিত হইবার পর কহিলেন, “আপনার ছবির তাৎপর্য বুঝিয়ে দেন।" _ > মোহন ছবির সম্মুখে মেমসাহেবের পার্শ্বে গিয়া দাড়াইয়া কহিল, “এই যে চিতা জুলছে, আমি বোঝাতে চেয়েছি, আজ শস্য-শ্যামলা বাঙল দেশ এমনি শ্মশান-ভূমিতে পরিণত হয়েছে। আর এদিকে যে অসামান্যা তরুণী হাটুর উপর মাথা রেখে কাদছেন, ইনিই ধরত্রী-কন্যা বঙ্গ-জননী। ইনি তার প্রিয় পুত্র-কন্যা অধুষিত বক্ষে যে জ্বালা, যে অসহ বেদনায় দিবা-রাত্রি দগ্ধ হচ্ছেন, তারই অভিব্যক্তি চিতার আগুনে ফুটে উঠেছে। বুঝেছেন এবার?” ইংরাজ-তরুণীর দুটি চক্ষু বেদনা-কাতর হইয়া উঠিল। তিনি এক-হাতে ছোট্ট রুমালটি চক্ষুর উপর বুলাইয়া লইয়া কহিলেন, “না, বুঝলাম না। আপনি আরও একটু বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিন।” মোহন কহিল, “আপনার যে আমার দেশের সঙ্গে প্রকৃত পরিচয় নেই, তাই বুঝতে