পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন “এক নম্বরের ইডিয়েট। যা’ চা-খাবার নিয়ে আয়, আমি এখনি একবার বাইরে যাবো।” মোহন আদেশ দিল। বিলাস বাহির হইয়া গেলে, মোহন সংবাদপত্রে পুনরায় মনোনিবেশ করিল। এক সময়ে একটি সংবাদের প্রতি তাহার দৃষ্টি আকৃষ্ট হইল। পড়িতে পড়িতে তাহার দুটি ভু কুঞ্চিত হইয়া উঠিল। তাহার মুখ ক্রোধে রক্তবর্ণ ধারণ করিল। সে সহসা টেবিলের উপর একটি প্রচণ্ড মুষ্ট্যাঘাত করিয়া কহিল, “না, হবে না, কিছুতেই না। হতে দেবো না বিলাস।” প্রভুর উত্তেজিত কণ্ঠস্বর শুনিয়া বিলাস, চা-এর কেটলি হাতে করিয়া ছুটিয়া আসিয়া কহিল, “কর্তা!” “চা রাখ। আগে লেখবার কাগজ আর দোয়াত-কলম দে।” মোহন ক্রুদ্ধ স্বরে কহিল। বিলাস আদেশ পালন করিয়া, খাবার আনিবার জন্য বাহির হইয়া গেল। যে সংবাদ পাঠ করিয়া মোহন উত্তেজিত হইয়াছিল, তাহা আমরা নিম্নে উদ্ধৃত করিয়া দিলাম ঃ– “আমরা শুনিয়া বিস্মিত হইলাম যে, বীণানগরের বিখ্যাত ধনী জমিদার নীলরতন সরকার মহাশয় বৃদ্ধ বয়সে একটি পঞ্চদশী বালিকাকে বিবাহ করিবার জন্য বদ্ধপরিকর হইয়াছেন। নীরতনবাবুর বয়স ৭৫ বৎসর। কয়েক বৎসর পূর্বে র্তাহার দ্বিতীয়া পত্নী পরলোক গমন করিয়াছেন। সরকার মহাশয়ের প্রথমা ও দ্বিতীয়া পত্নীর গর্ভজাত বহু পুত্রকন্যা বর্তমান। তাহার মত অতি বৃদ্ধের একটি বালিকাকে বিবাহ করিবার বাসনা যে নিতান্ত অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক, তাহাতে আমাদের বিন্দুমাত্ৰও সন্দেহ নাই। আমরা অবগত হইলাম, সরকার মহাশয়কে নিবৃত্ত করিবার জন্য র্তাহার পুত্র, কন্যা, জামাতা ও পরিবারের অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনগণ বিশেষরূপে চেষ্টা করিয়াও সফল হন নাই। উপরন্তু গ্রামের তরুণ-সম্প্রদায় এই বিবাহে ঘোরতর বিরোধী হইলেও প্রবল-প্রতাপ জমিদারের বিরুদ্ধে কোন কিছু প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করিবার শক্তি তাহাদের নাই। শুনিলাম যে হতভাগিনী বালিকার পিতা আশুতোষ দে মহাশয় নীলরতন সরকারের প্রজা ও খাতক দে মহাশয়ের সমস্ত আস্থাবর সম্পত্তি জমিদার সরকার মহাশয়ের নিকট কয়েক সহস্র টাকার দেনায় আবদ্ধ। দরিদ্র, সহায়হীন, দুর্বল আশুতোষবাবু যে নিতান্ত নিরূপায় হইয়া, তাহার কন্যার সমস্ত ভবিষ্যৎ সুখ-শাস্তি—এক কথায় সমস্ত জীবন বলি দিতে বাধ্য হইয়াছেন, সে বিষয়ে আমাদের কোন সন্দেহ নাই আমাদের মন এই ভাবিয়া বেদনাতুর হইতেছে যে, একটি তরুণী নারীকে এই বৃদ্ধের লালসা হইতে উদ্ধার করিবার কোন সামর্থ্য আমাদের কিংবা সমাজের নাই। প্রকাশ, গ্রামের তরুণ-সম্প্রদায় আদালতের সাহায্য প্রার্থনা করিয়া দরখাস্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু বিচারক মহাশয় আশুবাবুকে নাবালিকা কন্যা মাধুরীর একমাত্র আইনসম্মত অভিভাবক জানিয়া তাহাকে আদলতে হাজির করিয়া তাহার মত জানিতে চাহিলে, তিনি বলিয়াছেন যে তিনি স্বেচ্ছায় তাহার কন্যার এই বিবাহ দিতেছেন। জমিদার সরকার মহাশয় কোনও রূপ জোর-জুলুম বার্তাহাকে স্বীয় ইচ্ছার বিরুদ্ধে এই বিবাহ করাইতে বাধ্য করেন নাই। যদিও বিচারক মহাশয় পিতার কথা বিশ্বাস করিতে পারেন নাই, তাহা হইলেও তিনি দরখাস্ত ডিসমিস্ করিয়া দিতে বাধ্য হইয়াছেন। -