পাতা:মোহন অম্‌নিবাস প্রথম খণ্ড.pdf/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মোহন נשי ক্রুদ্ধও হইলেন ততো। তিনি সবিস্ময়ে ভাবিলেন, অসম্ভব স্পর্ধা এই দস্যুটার। আর একটি সুবৰ্ণ-সুযোগ নষ্ট হইল। কিন্তু দসু মোহন যে তাহার কথাকে এরূপ মূল্যবান বলিয়া ভাবে, তাহা যদি তিনি পূর্বাহ্নে বুঝিতে পারিতেন, তাহা হইলে যথোপযুক্ত বন্দোবস্ত করিতে পারিতেন। তিনি ভাবিয়াছিলেন..., প্রকৃতপক্ষে ছবির সম্বন্ধে কিছুই ভাবেন নাই। কারণ তিনি ভাবিয়াছিলেন, দসু্যর ছদ্মমূর্তি ধরা পড়িবার পরে সে ছবি দিতে যাইবার কল্পনাও মনে ঠাই দিবে না। কিন্তু....... কমিশনার টেবিলের ওপর রক্ষিত সুবৃহৎ ছবিখানির দিকে চাহিয়া রহিলেন। হতভাগ্য দসু যে একজন অতি উচ্চদরের শিল্পী, যে বিষয়ে তাহার কিছুমাত্র সন্দেহ রহিল না। কিন্তু...কমিশনারের মুখে উদ্বেগের চিহ্ন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। তিনি ভাবিলেন, যদি অন্যান্য বিষয়ের মত র্তাহার স্ত্রী সহিত দস্যুর আলাপের কাহিনী সবিস্তারে ঐ চোতা কাগজ “বাঙলার ডাকে প্রকাশিত হয়, তাহা হইলে তাঁহার মুখ দেখাইবার আর স্থান থাকিবে না। এমনকি তাহাকে চাকরি ছাড়িতেও হইতে পারে। চাকরি ছাড়িবার সম্ভাবনা মনে উদয় হইতেই কমিশনার সাহেবের মুখ ক্রোধে রক্তরাঙা হইয়া উঠিল। তিনি উত্তপ্ত স্বরে কহিলেন, “এই শয়তানকে গ্রেপ্তার করতেই হবে। যেমন করেই হোক তাকে চাই আমার। মানবতার, সুসভ্য-সমাজের এই দুষ্ট ক্ষত কেটে ছেটে ফেলতেই হবে আমাকে।” সহসা স্বামীর এই তপ্ত উচ্ছাসে মেমসাহেব বিস্মিত দৃষ্টিতে চাহিয়া কহিলেন, “কিন্তু ডার্লিং, মোহন তো সমাজের দুষ্ট ক্ষত নয়! তিনি অতি ভদ্র, অমায়িক, উচ্চপ্রাণ যুবক।” কমিশনারের বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না। তিনি স্তম্ভিত হইয়া কহিলেন, “বলো কি, ডালিং? দসু্য, আইন-ভঙ্গকারী ছিচকে চোরকে তুমি এতখানি সম্মানে ভূষিত করছ?” মেমসাহেব সপ্রতিভ স্বরে কহিলেন, “দুঃখ এই, তুমি বা তোমার ডিপার্টমেন্ট তাকে চিনলে না। তুমি যদি তার কথা শুনতে ডালিং, যদি তার মুখের ওপর ক্ষণে ক্ষণে ব্যথা, বেদনা, জ্বালা, ক্রোধের আভাসের ছুটাছুটি খেলা দেখবার সুযোগ পেতে, তা’ হ’লে ও-সব কথা তোমার মুখে আসতো না।” o কমিশনার বিপন্ন ভাবে কহিলেন, “না না, ডলিং, এ চলবে না। তোমাকে দদুটা منہ: হিপনোটাইজ করেছে। ঐ ছবিটা কিছুতেই আমি আমাদের ঘরে রাখতে দেবো না। বয়!” একজন ভৃত্য প্রবেশ করলে কমিশনার কহিলেন,"ঐ ছবিখন আমার অফিসে এখনি পাঠিয়ে দে। যা, নিয়ে যা।” NG মেমসাহেব প্রতিবাদ করিবার জন্য মুখ তুলিয়া একবার চাহিলেন, কিন্তু কিছু না বলিয়া নীরবে রহিলেন। তাহার সারা মুখে ব্যথার আভাস পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। ভৃত্য ছবিখানা লইয়া বাহির হইয়া গেল। কমিশনার ব্যস্তভাবে টিফিন সারিয়া অফিস যাইবার পূর্বে স্ত্রীকে বক্ষের নিকট টানিয়া কহিলেন, “ডালিং, একটু ঘুমিয়ে নাও। তাহলেই তোমার মনের এই ভাবটা দূর হয়ে যাবে। আমি ভুরি-ভুরি প্রমাণ পেয়েছি, দসু্যটা সম্মোহন বিদ্যা জানে।”